পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/১২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি
১০৭

সে-দিনে এসব বিষয়ে মানুষের মনে সংকীর্ণতা কম থাকায় তার মধ্যে শ্রেণীবিভাগ থাকলেও ভাগ-বাঁটোয়ারায় এসে পৌঁছায়নি। হয়ত এই কারণেই সে দিনের মুসলমান কবিদের রচিত পদের মধ্যে কোন নারী রচিত পদাবলী বা ছড়া গান, রূপকথা, উপকথা মিশিয়ে মিলিয়ে পর্দা বজায় রেখে আজও বেঁচে আছে কিনা তা’ নিশ্চয় করে বলা যায় না। হিন্দু মুসলমান মেয়েদের কারুই বাইরে নাম জাহির করবার মত চিত্তবৃত্তি তখন অল্পই ছিল, বাদশা হারেমের মখ্‌ফিদের মত হয়ত কেউ কেউ তাঁদের বিশিষ্ট দানে নিষ্কাম দাতৃত্বও করে রেখে গেছেন, তাঁরা জানতেন সাহিত্যিক সাহিত্যরস সৃষ্টি করে নিজের মনের অনুভূতি দিয়ে। সেই সাহিত্য অথবা অপর কোন ললিত কলা শিল্পীর রচিত সৃজিত বস্তুজাতকে নিজের অন্তরের রসবস্তু দিয়ে, সৌন্দর্য্য উপলব্ধি দিয়ে এবং হৃদয় দিয়ে। রূপে রসে গন্ধে বর্ণে ছন্দে শোভায় সে হয় একটী প্রস্ফুটিত সুরভি পুষ্পের মত, সুরভরা বীণার ঝঙ্কারের মত, জাতি নীতি কুল গোত্র বিহীন ও সার্ব্বজনীন। এ বিষয়ে সহরের বাইরে মুক্ত মানবতার উদার ক্ষেত্রে হিন্দুনারী এবং মুসলিম নারী বড় বিশেষ ভেদ রাখেননি। তাঁদের দান একই পারাবারে সম্মিলিত নদীদ্বয়ের মতই মিলে মিশে এক হয়ে থেকে গেছে, সাম্প্রদায়িকতাপূর্ণ ক্ষুদ্র চিত্তের পরিচয় রক্ষা করে চলেনি।

 খৃষ্টীয় অষ্টাদশ শতকের ও উনবিংশ শতকের প্রথমদিকের নারী লেখিকাদের কয়েকজনের নাম এবং তাঁদের রচিত কবিতা বা গান এখনও খুঁজে পাওয়া যায়। আনন্দময়ী দেবী, গঙ্গামণি দেবী, যজ্ঞেশ্বরী দেবী, সুন্দরী দেবী, দ্রবময়ী দেবী, লক্ষ্মী দেবী