পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/১৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১৬
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি

পূজাপাঠ নিয়মিত দেখা এবং করার জন্য উচ্চ শিক্ষার সুযোগ খুবই বেশী ছিল। অনেকে কেবল সাহিত্য, ব্যাকরণ এবং পুরাণ পড়েই শিক্ষা সমাপ্ত করতেন, কোনো কোনো শক্তিমতী দর্শন-শাস্ত্রের গভীরতার মধ্যে প্রবিষ্ট হ’য়েও প্রমাণ করতেন, অনুকুল অবস্থায় নারী পুরুষের চেয়ে বিদ্যার ক্ষেত্রে অন্ততঃ হীন নয়। দুর্ভাগ্যক্রমে তাঁর মধ্যে অনেকেই তাদের পাণ্ডিত্যের লিখিত নিদর্শন রেখে যাননি, সকলে আবার বাংলা ভাষাতেও লেখেননি, লিখলেও সাধারণের সামনে ধরতে সাহস করেননি। তাদের এবং তাদের পূর্বযুগের মেয়েদের লেখা জনপ্রিয় গান ও ছড়াগুলি ছাড়া পাণ্ডিত্যপূর্ণ অল্প পরিচিত অনেক লেখাই মুদ্রাযন্ত্রের প্রচলনের পূর্বযুগে নিঃশেষে বিলুপ্ত হ’য়ে গেছে। পরের যুগেও সবাকার ঘরের আবহাওয়া, সামাজিক অবস্থা এবং অর্থানুকূল্য এবং আত্মজনের সহানুভূতি না থাকায় কত লেখিকার লেখা উই ইঁদুরের ভক্ষ্য হয়েছে তার কি হিসাব পাওয়া সম্ভব!

 খৃষ্টীয় উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমদিকে শ্রীহট্টের ‘হরিভক্তি তরঙ্গিণীর রচয়িতা’ সহজিয়া সাধক শ্যামকিশোর ঘোষের সাধনসঙ্গিনী ‘শ্রীমতী’ কতকগুলি আধ্যাত্মিক পদ রচনা করেছিলেন, রঘুনাথ লীলামৃতে এই রকম কয়েকটি পদ উদ্ধৃত হয়েছে। এই সময়ে সাহিত্যে এবং সমাজে বাংলার চরম অবনতির দিন চলছিল। মিথ্যাচার, ব্যভিচার প্রভৃতি সামাজিক দুর্নীতির ছাপ তদানীন্তন সাহিত্যে পড়েছিল, কবির লড়াই, তর্‌জা, হাফ্‌ আখড়াই পাঁচালী, টপ্পাগান প্রভৃতিতে শ্লীলতার বালাই ছিল না; ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের সময় পর্যন্ত কোনো ভদ্রমহিলার প্রকাশ্যে সাহিত্যক্ষেত্রে নামবার উপায় ছিল না। ভারতচন্দ্রের উত্তরাধিকারীদের প্রাবল্যে নীতি-