পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/১৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি
১১৯

পাঠকের বিচারে মাঘ কালিদাসের উর্দ্ধে এবং ভারতচন্দ্র চণ্ডীদাসের উর্দ্ধে স্থান পেয়েছিলেন, মধুসূদন ইলিয়াডকে রামায়ণমহাভারতের চেয়ে উপরে স্থান দিতে কুণ্ঠিত হননি, কিন্তু আজ দিন ফিরেছে। সুতরাং ঊনবিংশ শতাব্দীর বাঙ্গালী লেখিকাদের সম্বন্ধে আজকের পাঠকের মত যাই হোক, তাঁদের মধ্যে ভালো জিনিষ ষাঁর লেখায় যা’ আছে, মহাকালের নিরপেক্ষ দরবারে সেগুলি একটা স্থায়ী স্থান পাবেই, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।

 যাই হোক, খৃষ্টীয় ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে ইংরাজী সাহিত্যের প্রভাব প্রথম প্রত্যক্ষভাবে বাংলা সাহিত্যের কর্ণধারদের প্রভাবিত ক’রল, সমাজে নীতিজ্ঞান এবং সাহিত্যে সুরুচি ফিরে এল। উপন্যাস, নাটক প্রভৃতির রূপ দেশের সঙ্গে মিল রেখে বিদেশী ছাঁচে ঢালাই হ’য়ে সুনির্দিষ্ট হ’ল, বাংলায় কবিতার এবং গদ্যের সমভাবে উন্নতির সূচনা দেখা গেল। অবশ্য নারী লেখিকাদের মধ্যে তখনো সকলে এই পরিবর্তনকে মেনে নেননি, অজ্ঞাতনাম্নী নারী কবি তখনো এইভাবে শ্যামা-বিষয়ক গান লিখছেন:

“কাপড় নেই ব’ললে হ’ত, না হয় আমি দিতেম কিনে।
ছি ছি, কি লাজের কথা! বসন-বিহীনা নবীনে।”

ফরিদপুরের অবলা সেন তখনো চিরপরিচিত ভাষায় অন্তরের বেদনা দেবতাকে জানাচ্ছেন:

“দীননাথ, শুন নিবেদন,
সংসার পূজিয়া মোরা, নিশিদিন, আত্মহারা
খোয়াইনু জীবন জনম॥”