পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/১৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি
১২১

নিঃস্রোত, জীবজন্তু নরনারী গভীর নিদ্রামগ্ন, শুকতারা পূর্বাকাশ থেকে এখনো অস্ত যেতে পারছেন না। সূর্যদেব অরুণরথে সমাসীন হ’য়ে উদয় হ'তে ভয় পাচ্ছেন। সৃষ্টিতে প্রলয় আসে আসে।”

 দেখা যাচ্ছে আজকের দিনের মতো সক্ষম এবং অক্ষম দু’রকম রচনাই সে-যুগে অনেক হয়েছিল, পিতামহীদের সিন্ধুক বাক্স ঘাঁটলে এ ধরণের লেখা কীটবিশিষ্ট হয়ে এখনও হয়তো কিছু কিছু আবিষ্কার হ’তে পারে। মনীষী ভূদেব মুখোপাধ্যায়ের পুত্রবধূ এবং বঙ্গীয় নাট্যশালার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বহু নাটকের লেখক নগেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কন্যা স্বর্গীয়া ধরাসুন্দরী দেবীর অধিকাংশ লেখাই তাঁদের এডুকেশন গেজেটে ছাপা হ’লেও পুস্তকাকারে ছাপা হয়নি। তাঁর অ-মুদ্রিত ‘নন্দরাণী’ থেকে সে যুগের গদ্যের একটু উদাহরণ দেব:

 ‘মকরসংক্রান্তির সকালে ত্রিবেণীরঘাটে নৌকায় নৌকায় গাঁদি লাগিয়া গিয়াছে। কোনো নৌকায় কন্‌সার্টের দল গান-বাজনা লইয়া ব্যস্ত, কোনো নৌকায় চাঁদোয়া খাটাইয়া বাবুরা ঘিরিয়া বসিয়া মহা আনন্দে তবলা বাজাইতেছেন, মধ্যে খ্যাম্‌টাওয়ালির অভাবে টিপকলের নোলক নাকে মেয়ে-সাজানো ছেলের নাচ চলিতেছে।……ঘাটে কীর্তনের দল কাপড় পাতিয়া ঢোল বাজাইয়া ভিক্ষা করিতেছে। ঘাটের উড়িয়া ব্রাহ্মণগণ সিংহাসনে পিতলের ঠাকুর সাজাইয়া ছাপ লইয়া স্নানার্থিনীদের স্নানান্তে ডাকাডাকি করিয়া পয়সা লইয়া কপালে ছাপ লাগাইতেছে। বহুরূপীর দল কেহ গণেশ কেহ শিব দুর্গা সাজিয়া থালা হাতে করিয়া ঘুরিয়া ঘুরিয়া ভিক্ষা করিতেছে। সকলেই মহাব্যস্ত।…’

OP. 92—16