পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/১৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২৬
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি

ভস্মীভূত, আমার অগণ্য আশা”; প্রভৃতি এবং তাঁর আত্মবিলোপকারী প্রেমের কবিতা: ‘হয় হোক প্রিয়তম, অনন্ত জীবন মম, অন্ধকারময়। তোমার পথের পরে অনন্তকালের তরে আলো যদি রয়।”

 প্রত্যেকটিই নিজ নিজ ক্ষেত্রে অতুলনীয়। ১৯৩৩ খৃষ্টাব্দে সত্তর বৎসর বয়সে এঁর দেহান্তর হয়েছে। সকলের প্রতি সহানুভূতিপূর্ণ মিষ্ট মধুর স্বভাবের জন্য এঁরা তিনজনেই কেহ কাহারও চেয়ে কম ছিলেন না। হিন্দুসমাজের মেয়েদের সেকালের বৈশিষ্ট্য প্রথমোক্তাদের মধ্যে ত’ ছিলই, আধুনিক সমাজে জীবন কাটালেও কামিনী রায়ের মধ্যেও প্রাচ্য পাশ্চাত্যের সুমধুর সমন্বয় ঘটেছিল, স্নেহ প্রেমের প্রাচুর্যই সেই প্রাচীন আদর্শ, যাতে করে অপরিচিতকে মুহূর্তে আপন করে, আপনকে পর করে না।

 এই যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিভাশালিনী লেখিকা স্বর্ণকুমারী দেবী জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ীর মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের চতুর্থ কন্যা (১৮৫৫-১৯৩২)। তাঁহার আবির্ভাবে বাংলার নারী সমাজের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হ’য়ে উঠেছিল। সেই যথার্থ যুগ-সাহিত্যিকা মহীয়সী মহিলাকে তদানীন্তন সুধীসমাজ মুক্তকণ্ঠে সাধুবাদ দিয়েছেন। তাঁর পূর্বেও মেয়েরা কবিতা গল্প প্রবন্ধ লিখেছেন, কিন্তু মেয়েদের লেখা তখন পর্যন্ত খানিকটা কৃপার চক্ষেই দেখা হত। তিনিই প্রথম সাহিত্যক্ষেত্রে সকল দিক দিয়ে নারীর শক্তিকে জাগিয়ে তুললেন, নারীর রচনাকে পুরুষের কৃপাদৃষ্টি থেকে উদ্ধার ক’রে শ্রদ্ধার এবং বিস্ময়ের বস্তু ক’রে নিলেন। তাঁর পূর্বে কোনো মহিলা লেখিকা একাধারে গদ্যে পদ্যে সমানভাবে তাঁর