পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/১৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩৪
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি

মতো রাধাকৃষ্ণের মধ্যে দিয়েই তো যথেষ্ট হা-হুতাশ করা যায় এবং সেই সঙ্গে পরমানন্দ উপলব্ধি করাও চলে। এই সনাতন প্রথায় এ যুগেও অনেকে চলেছেন। গদ্য রচনায় নারীর কর্তব্য সম্বন্ধে আলোচনা ও প্রচলিত রীতিনীতির অনুকূলভাবে গল্প উপন্যাস রচনা হ’ত, নারীপ্রগতি তখনো আত্মপ্রকাশ করেনি। নিজেদের সমাজধর্মের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ না করেও অনেক বড় কাজ এবং ভালো কাজ মেয়েদের করবার আছে, সেই বোধটা তখন জাগ্রত হয়েছিল এবং তখনকার লেখিকারা জনসমাজের মধ্যে, তথা নারীসমাজের মধ্যে সেই সত্যদৃষ্টি খুলে দেবার যথোচিত সহায়তাও করেছিলেন। কতকগুলি সামাজিক কুপ্রথা যা’ ব্যক্তিবিশেষের খেয়ালে বা সাময়িক প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠা পেয়ে আলোকলতার মত আসল গাছকে মারতে বসেছে, সেই মারক- লতা উন্মূলনের প্রচেষ্টা করার অধিকার সকলেরই আছে, তাঁরাও তা’ করেছেন; যেমন বিবাহ-কৌলীন্যের, যেমন পুরুষের উচ্ছৃং্‌খলতার, যেমন স্ত্রীশিক্ষার, যেমন কঠোর পর্দাপ্রথার, যেমন বরপণের।

 ১৮৭৬ খৃষ্টাব্দে বিরাজমোহিনী দাসীর কবিতাহার এবং “জনৈকা ভদ্রমহিলার” লেখা (সম্ভবতঃ লক্ষ্মীমণি দেবীরই) ‘সন্তাপিনী’ নাটক প্রকাশিত হয়। “সন্তাপিনী” নাটকে বঙ্গ অন্তঃপুরের চিত্র খুব জীবন্ত; ব্যঙ্গ এবং নারীসুলভ বাগ্‌বিন্যাসে বইটি সুখপাঠ্য, বিধবাবিবাহের স্বপক্ষে এবং বহু বিবাহের বিপক্ষে তৎকালোচিত যুক্তিতর্কও বইটিতে যথেষ্ট পাওয়া যায়। পর বৎসর স্বর্ণকুমারী দেবীর ‘কোরকে কীট’ এবং ‘মনোরমা’ লেখিকা হেমাঙ্গিনী দেবীর রোমাণ্টিক উপন্যাস “প্রণয়-প্রতিমা” (১৮৭৭ খৃঃ) প্রকাশিত হয়।