পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

১৴৹

বিপর্যয়ে বিনষ্ট হয়েছে সে বিষয়ে সন্দেহ নেই, সেই সমস্ত ক্ষয়ক্ষতি বাদ দিয়ে যে ক’টি রচনা আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে, তাই নিয়ে আমাদের সন্তুষ্ট থাকতে হবে।

 যারা সাহিত্যসৃষ্টি করে গেছেন, তাঁদের মধ্যে কেউ ছিলেন ধর্মপ্রাণ সাধিকা, কেউ ছিলেন চিন্তাশীলা দার্শনিকা, কেউ ছিলেন রসজ্ঞা কবি, কেউ ছিলেন সিংহবীর্যা বীরনারী, কেউ ছিলেন সুপণ্ডিতা, কেউ ছিলেন অক্ষরজ্ঞানবিহীনা। তাঁদের রচনার উদ্দেশ্য বিভিন্ন। প্রকাশভঙ্গী বিভিন্ন; কেবল এক জায়গায় তাদের মিল আছে। তাঁরা প্রত্যেকেই তাঁদের বক্তব্যকে বাঙ্ময়ী মূর্ত্তি দিয়েছেন, তাঁদের বাণীকে সর্বমানবের উত্তরাধিকার রূপে রেখে গেছেন। তাঁদের কারো রচনা পাওয়া গেছে, কা'রো শুধু নাম পাওয়া গেছে। অন্যান্য দেশের অল্প-খ্যাত অনেকের নামই আমরা দিতে পারিনি, বিখ্যাত বিদেশিনীদেরও কারো কারো নাম এবং রচনার উল্লেখ হয় তো বাদ পড়ে গেছে। ভবিষ্যতের ঐতিহাসিকের দৃষ্টি আকর্ষণ ক'রে পৃথিবীর সাহিত্যক্ষেত্রে নারীর দান সম্বন্ধে সম্যক আলোচনার পথ প্রশস্ত করাই আমার উদ্দেশ্য;—কোনো বিষয়েই শেষকথা বলবার অধিকার আমার নেই। যাঁরা ভবিষ্যতের রচয়িত্রী, তাঁদের অতীত সম্বন্ধে একটা মোটামুটি ধারণা থাকা বিশেষ দরকার। দুর্ভাগ্যের বিষয় আজকের দিনে আমাদের দেশের অনেক নারীরই স্বদেশের অতীত সম্বন্ধে এবং সেই সঙ্গে অতীত নারীর স্থান এবং দান সম্বন্ধে সুস্পষ্ট ধারণা নেই, এককথায় আত্মবিশ্বাস নেই। এই আত্মবিশ্বাসের অভাব আমাদের পরদোষানুসন্ধিৎসু করেছে, পরানুকরণপ্রিয় করেছে। দেশে এবং বিদেশে সাহিত্যের প্রয়োজন, সমাজের সঙ্গে সাহিত্যের সম্বন্ধ, সাহিত্যের উৎকর্ষ অপকর্ষের বিচার নিয়ে বহু তর্ক ইতিপূর্বে হ'য়ে গেছে। এ নিয়ে আমার নিজের মতও আমি ইতিপূর্বে বহুবার বলেছি। আমি সাহিত্যকে সমাজের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে ‘