পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/২১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৯০
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী

 হিন্দু-মুসলিম শিক্ষিতা মেয়েদের আমরা এই পথেই চলতে অনুরোধ করি, ক্ষুদ্র “স্বকে” বৃহত্তর স্বার্থে নিমজ্জিত ক’রে দেওয়াই যথার্থ স্বার্থ ত্যাগ, মায়ের বোনেরা যদি এই শিক্ষা তাঁদের রক্তের ভিতর দিয়ে, শিক্ষার ভিতর দিয়ে সন্ততি-শরীরে সঞ্চারিত করতে পারেন, তবে কোন শক্তি তাকে নিজ স্বার্থের যুপকাষ্ঠে বলি দিতে সমর্থ হবে না। ইসলামের বাণী, গীতার বাণীর সঙ্গে মিলে গিয়ে আসমুদ্র হিমাচলে জীমূত-মন্দ্রে ধ্বনিত হবে। পরাধীন জাতির সমস্ত গ্লানি ও সমূদয় জড়তাকে পরিহার করে সমগ্র ভারতবর্ষ এক সঙ্গে সমকণ্ঠে উচ্চারণ করে, আত্মোপলব্ধি করবে, এমন কি সমগ্র জগৎবাসীকেই ডেকে এনে এই মহা-মিলনের মহা-বাণী শোনাতে পারবে:

“শৃন্বন্তু বিশ্বে অমৃতস্য পুত্রা”

 এ সম্বোধন হিন্দুর জন্য নয়, উপনিষদকার ঋষি বিশ্বের সমুদয় “অ-মৃতের পুত্রদেরই” এই অপূর্ব তথ্য শ্রবণ করবার জন্য আহ্বান করেছেন, জাতি নীতি কুল গোত্র বাছেননি।

 “ভগবান এক ও অদ্বিতীয়ই শুধু ন’ন, মানুষও তার পিত্রৈশ্বর্যের পরিপূর্ণ অধিকারী, এই কথাই হিন্দু মুসলমানের আত্মিক প্রেরণার মহত্তর বাণী, মন্দর-মথিত বাসুকির ক্লান্তশ্বাসসমুত্থিত বিষবাষ্পচ্ছন্ন পৃথিবীতে দুই বিভিন্ন ভঙ্গীতে উচ্চারিত এই একই বাণী শোনাবার সময় তাদের সম্মুখে এগিয়ে এসেছে, এই শুভ লগ্নকে সে যেন মূঢ় সঙ্কীর্ণতার দ্বারা ভ্রষ্ট হ’তে না দেয়। এই শুভ কার্যের সম্পূর্ণ ভার বিশ্ব-সন্তানদের জননীদেরই প্রধানতঃ, যেহেতু ঐ অমৃতের পুত্ররা সাক্ষাৎ সম্বন্ধে তাঁদেরই ত পুত্র। তাঁরাই তাঁদের অমৃত-পরিবেশনের পূর্ণ স্বত্বাধিকারিণী।