পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/২৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৩২
সাহিত্যে নারী : স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি

 দর্পণের সঙ্গে তুলনা না দিয়ে সাহিত্যকে চন্দ্র এবং সমাজকে সূর্য ব’ললেই বোধ হয় উপমা সার্থক হয়। আমরা জানি, সূর্যের আলোই চাঁদের গায়ে প্রতিফলিত হয়ে চাঁদের আলো হ’য়ে আমাদের কাছে ফিরে আসে, তবু এও জানি, যে সে এক হয়েও এক নয়। অন্ধকারের সমুদ্রগর্ভে সমাজের সূর্য যখন ডুবে যায়, দৈন্যে, দ্বন্দ্বে, বিদ্বেষে, ক্লান্তিতে জীবন যখন অসহনীয় হ’য়ে ওঠে, তখন সাহিত্যের চন্দ্র সেই নিবিড় অন্ধকারকে তার স্নিগ্ধজ্যোতি দিয়ে সহনীয় এবং মনোরম ক’রে তোলে! অর্জুনের লক্ষ্যভেদে আমরা বরমাল্য লাভ করি, রামায়ণের সীতার ও মেঘদূতের যক্ষপত্নীর অশ্রুজলে আমাদের ব্যক্তিগত শোকাশ্রু ধুয়ে যায়। একদিকে সমাজের সূর্যের আলোয় আমরা তথ্যের জগৎকে আগাগোড়া সুস্পষ্টরূপে দেখতে পাই, দৈনন্দিন জীবনের প্রতি প্রান্তের প্রতি ক্ষুদ্র বস্তুটি তার ভালো মন্দ, ঐশ্বর্য, দৈন্য এবং মালিন্য নিয়ে একসঙ্গে আমাদের চোখে পড়ে, সমাজের সূর্যালোক আমাদের কর্মক্ষেত্রে কঠিন সংগ্রামে প্রবৃত্ত হ’তে আহ্বান করে, অপরদিকে সাহিত্যের চন্দ্রালোক তার অপরূপ মায়াপ্লাবনে সেই তথ্যের জগতকে সৌন্দর্যে স্নান করিয়ে নিয়ে আসে,—তার সমস্ত বিকৃতি, বিরোধ, দৈন্যকে অস্পষ্ট ক’রে, আবৃত ক’রে তার অন্তর্নিহিত মহিমাকে এবং সৌন্দর্যকে স্ফুটতর ক’রে তোলে, এক অনির্ব্বচনীয় উপায়ে আমাদের মানবজীবনের গূঢ়তর সত্যের সম্মুখীন ক’রে দেয়। তার শীতল কৌমুদীধারায় আমাদের চোখ জুড়িয়ে যায়, আমাদের শ্রান্ত উদ্বিগ্ন চিত্ত শান্তি লাভ করে। তবে, পরিপূর্ণ দিবালোকেও চাঁদ সূর্যকে আবৃত ক’রে গ্রহণ ঘটাতে পারে এই যা’ তার দোষ!