পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/২৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৩৪
সাহিত্যে নারী : স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি

স্বগোত্র ক'রে ছেড়েছে। এ না হ'লে বোধ হয় তাঁরা সেযুগের ধর্ম্মসাহিত্যে পাংক্তেয় হ'তেন না। এই দেবীকৃত মানবীরা ছাড়া ঋষি এবং কবিদের মনঃকল্পিত দেবী-অপদেবীদের ঘিরেই বিভিন্ন দেশের প্রাচীন সাহিত্য গড়ে উঠেছিল। মানব-মনের শৈশবাবস্থায় সেদিনে নদী-পর্বত, বৃক্ষ-লতা, পশুপক্ষী থেকে আরম্ভ ক'রে প্রকৃতির বিভিন্ন শক্তির মধ্যে মানুষ স্বতঃই দৈবীলীলা প্রতাক্ষ করত। ভাবুকের কল্পনায় এরা কেউ পুরুষ, কেউ বা নারীমূর্তি ধারণ করে মানুষের শুভাশুভ নিয়ন্ত্রণ করতেন। এই সব দেবী বা অপদেবীদের চরিত্র পার্থিব নারী-চরিত্রের ছাঁচেই গড়া,— কেউ বা স্নেহময়ী, অন্নদা, জ্ঞানদা, সুখদা,—কেউ বা ভয়ঙ্করী, কোপন, নররক্তলোলুপা। কাউকে পূজা দেওয়া হ'ত ভক্তিতে, কাউকে পূজা দেওয়া হত ভয়ে। বিভিন্ন দেশের পুরাণের দেবী, দানবী, অপ্সরী, কিন্নরী, গন্ধর্বকন্যা, নাগকন্যা, বনদেবী, জলদেবী, ভূমিদেবী, যক্ষিণী, রাক্ষসী, পিশাচী, ডাকিনী থেকে আরম্ভ করে রূপকথার পরী, হুরী, পেত্নী, শাঁখচুন্নি পর্যন্ত বহু বিভিন্ন স্তরের বহু বিচিত্র রূপের শুভাশুভকারিণীর সন্ধান আমরা পৃথিবীর প্রাচীন লিখিত এবং অলিখিত অভিজাত এবং গণ সাহিত্যে দেখতে পাই। এদের মধ্যে কেউ বহুদর্শী ঋষির মানসী প্রতিমা, কেউ বা কুসংস্কারান্ধা গ্রাম্যবধূর কপোল-কল্পনা, স্রষ্টার বা স্ত্রীর জ্ঞানবুদ্ধি অনুসারে কেউ বা মহিমাময়ী রাজরাজেশ্বরী, কেউ বা গ্রাম্য কুরুচি ও কুনীতির কুৎসিত প্রতিমূর্তি। সাহিত্যের ইতিহাসে এঁদের স্থান নিতান্ত নগণ্য নয়, সেইজন্য এঁদের সম্বন্ধে দু’চার কথা বলা অপ্রাসঙ্গিক হবে না। প্রসঙ্গতঃ এখানে একটা কথা বলে রাখা দরকার। ভারতীয় এবং বহির্ভারতীয়