পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/২৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাহিত্যে নারী : স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি
২৩৭

সঙ্গে ক্রমে একার্থিকা হয়ে গেছেন। শত শত গ্রাম্য অনার্য দেবতা এই ভাবে আর্য দেবতাদের সঙ্গে মিলে মিশে এক হয়ে গেছেন, তাঁদের বিভিন্ন জীবনেতিহাস এবং পূজাপদ্ধতি ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে আজও প্রায় অক্ষুণ্ণ আছে, কিন্তু তাঁদের একত্রে কেউ কখনও ভুলেও অবিশ্বাস করে না। বৈদিক যুগেই তাঁরা ঋষিদের দয়ায় এবং দূরদর্শিতায় আর্যসমাজে স্থান পেতে আরম্ভ করেন, পৌরাণিক যুগে ক্রমে বৈদিক দেবতাদের স্থানচ্যূত ক'রে অথবা তাঁদের নাম মাত্র অবশিষ্ট রেখে তাঁরা হিন্দুসমাজের অমরাবতীতে একচ্ছত্র অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত করে নিয়েছেন। যাই হোক, বৈদিকযুগের এই সব দেবীচরিত্রের মধ্যে আমরা তদানীন্তন নারী চরিত্রের ছবি স্পষ্টই দেখতে পাই, এ কথা অস্বীকার ক'রে লাভ নেই। ঋষি-কবিদের কাব্যপ্রেরণার মূল উৎস বাস্তব বা কাল্পনিক জড় প্রকৃতি বা জীবন্ত মানুষ যাঁরাই হৌন, তাঁদের সৃষ্ট চরিত্রগুলির রূপ-চিত্রণে মাধুর্য ও মহিমার যে অপরূপ সমন্বয় আমরা দেখতে পাই, তার তুলনা জগতে বিরল। তাদের মানসী প্রতিমাগুলি পৃথিবীর যে কোন দেশের যে কোন শ্রেষ্ঠ কবির বিরচিত রূপসৃষ্টির পাশে সগৌরবে স্থান পেতে পারে। দু'একটি উদাহরণ দেব। হোতা ইড়া দেবীকে ডেকে বলছেন: “অয়ি দেবি! তোমার রূপ সুন্দর, বর্ণ সুন্দর, বর্ষণশক্তি সুন্দর, তুমি এস,—আমাদের এই সুসজ্জিত যজ্ঞ-গৃহের অভিমুখে এস,—আমাদের ব্রতের প্রতি অনুকূল হ'য়ে আমাদের শীর্ষে কল্যাণ হস্ত অর্পণ করো। তুমি ইড়া, তুমি অদিতি, তুমি সরস্বতী, তুমি আনন্দময়ী, তুমি আনন্দদায়িনী, তুমি সুন্দরী,[১]


  1. রন্তিরসি রমতিরসি॥