পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/২৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৪৪
সাহিত্যে নারী : স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি

অরুন্ধতী, অনসূয়া, লোপামুদ্রা প্রমুখ ব্রহ্মবাদিনী বা ঋষিপত্নীদের আমরা সম্পূর্ণ ঐতিহাসিক চরিত্র বলেই মনে করি। পাণ্ডিত্যে, তেজস্বিতায়, মহত্ত্বে, ত্যাগে, বীর্যে ভারতীয় পুরাণের এই উজ্জ্বল জ্যোতিষ্কেরা পৃথিবীর যে কোনো দেশের সাহিত্যে নারীর আদর্শ বলে গৃহীত হতে পারেন। তবে আমাদের বিশ্বাস এই চরিত্রগুলি বাস্তব আদর্শের উপর দাঁড়িয়ে আছে বলেই এঁদের সৃষ্টির সম্পূর্ণ কৃতিত্ব ব্যাস-বাল্মীকির নয়! কবিরা তাঁদের স্রষ্টা নয়, প্রচারক মাত্র, তাঁদের যশোগাথাকে ছন্দোবদ্ধ করে স্থায়িত্ব দিয়ে তাঁরা নিজেদের গুণগ্রহিতার পরিচয় দিয়ে ধন্য হয়েছেন মাত্র।

 ভারতবর্ষের বাইরে মিশর, ব্যাবিলন প্রভৃতি দেশের সভ্যতাকে ভারতের বৈদিক সভ্যতার সমসাময়িক ব'লে অনুমান করলে খুব অসঙ্গত হবে না। ঐসব দেশের প্রাচীন সাহিত্যে রাজনৈতিক চিঠি-পত্র, অনুশাসন, দিগ্বিজয়ের কাহিনী প্রভৃতির বাইরে আমরা যে পৌরাণিক কাহিনী এবং রূপকথাগুলি পাই, তার মধ্যেও প্রথমতঃ দেবী এবং অপদেবীদের প্রাধান্যই দেখতে পাওয়া যায়। এঁদের পর দেবীকৃত মানবীদের স্থান। মিশরে আকাশ দেবী ‘ন্যুট্’ পৃথিবীদেবের ঔরসে চারটি সন্তানের জন্ম দেন, তার মধ্যে তার কন্যা ‘আইসিস’ স্বামী ওসিরিস কনিষ্ঠ ভ্রাতা সেটের হস্তে নিহত হলে, মন্ত্রপ্রভাবে তাঁকে পুনরুজ্জীবিত করেন এবং পুত্র হোরাসকে স্বামী হন্তাকে বিনাশ করতে প্ররোচিত করেন। এই আইসিস মিশর দেশের মহাশক্তির প্রতীক। আইসিস তাঁর ভাই ওসিরিসকে বিয়ে ক'রে পৃথিবী শাসন করেছিলেন, ব'লে প্রথিত আছে। ওসিরিস তাঁর ভাই সেটের হাতে নিহত হ'লে, আইসিস মন্ত্রপ্রভাবে স্বামীকে পুনর্জীবন দান ক'রে পাতালপুরীর