পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/২৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৫৬
সাহিত্যে নারী : স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি

কুহকিনী সার্সির পতিহত্যা, সাইরেনদের মধুর কণ্ঠস্বরে ভুলিয়ে নিরীহ নরহত্যা উল্লেখযোগ্য কদর্য চিত্র। একদিকে স্বামীর উপর প্রতিহিংসা নেবার জন্য ‘প্রোকু’ নিজের ছেলেকে কেটে তার মাংস স্বামীকে খাওয়াচ্ছেন, এই লোমহর্ষণ চরিত্র-চিত্র যেমন দেখা যায়, তেমনি আর একদিকে সন্তানগর্বে দেবতাকে অবজ্ঞা করে ‘নায়োবি’ দেবরোষে তেরোটি সন্তানের মৃত্যু দেখে কেঁদে কেঁদে পাথর হ'য়ে গেছেন, সেই পাথরে শুধু নিরন্তর অশ্রুর ঝরণা ঝরছে, এই করুণ কথা-চিত্রও পাই। ভারতীয় পুরাণের সঙ্গে তুলনায় গ্রীক পুরাণে ‘মন্দ চরিত্র’ অনেক বেশী এবং তা' অতি কদর্য! পিতৃঘাতিনী ‘স্কাইলা’, পতিঘাতিনী ‘আসিওনি', ‘ক্লিটেমনেষ্ট্র প্রভৃতির দল গ্রীসে যত সুলভ, ভারতে তেমন নয়, বরং তুলনাই হয় না। উর্বশীর অভিশাপও ভারতে বার বার ঘটেনি! বঙ্গ-সাহিত্যের ছোটখাট দেবীর ভক্তদলের পতন অবস্থার সহায়তা নিয়ে পূজালোভে অনেকের উপর অত্যাচার করলেও মানবের রূপমোহে গ্রীকদেবীদের মতো কদর্য্য মনোবৃত্তির আদৌ অধিকারিণী ছিলেন না। চণ্ডী, মনসা, শীতলা যিনিই হোন না কেন, নিজ নিজ সতীধর্ম্মে অচলা থেকেই শুধু প্রতিহিংসাবৃত্তিরই চরিতার্থতা করেছেন, নিজের পূজা প্রচারের উদ্দেশ্যে; এই পর্য্যন্ত! এদেশে চরিত্রহীন ইন্দ্রের পত্নী পতিব্রতা ইন্দ্রাণী।

 রোমান কল্পনারাজ্যে গ্রীসের প্রভাব এত বেশী এবং অনুকরণস্পৃহা এত প্রবল যে, তাকে গ্রীক কল্পনারাজ্যেরই অক্ষম রূপান্তর বলা চলে। দেবদেবীরা তো অধিকাংশই গ্রীস এবং মিশরের, এমন কি পারস্যের আমদানী। জিউসকে জুপিটার, হীরাকে