পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাহিত্যে নারী : স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি

 নারীদের বেদমন্ত্র রচনার যুগ কেটে গেলেও বহুদিন পর্যন্ত তাঁদের বেদমন্ত্রে অধিকার ছিল। গোভিল গৃহ্যসূত্রে এবং কাঠক গৃহ্যে নারীর বেদপাঠের সমর্থন আছে। তারা যজ্ঞোপবীত ধারণ করতেন (গোভিল, ২, ১, ১৯)। আচার্য এবং উপাধ্যায়ারা আচার্য্যের পত্নী আচার্য্যাণী ও উপাধ্যায়পত্নী উপাধ্যায়ী থেকে পৃথক ছিলেন, তাঁরা নিজেরাই ছাত্রীদের পড়াতেন, অর্থাৎ মেয়েদের উচ্চশিক্ষার জন্যও অনেক সময়ে পুরুষ-গুরুর প্রয়োজন হত না, মেয়ের নারী-গুরুর কাছেই বেদবিদ্যা পর্যন্ত শিখতে পারতেন পাণিনির যুগেও। এই যুগের পণ্ডিতাদের মধ্যে মীমাংসাচার্য্য কাশকৃৎশ্নির মীমাংসায় ব্যুৎপন্ন। কাশকৃৎদের এবং প্রাচীন ব্যাকরণ আপিশলে ব্যুৎপন্না আপিশলাদের পরিচয় কাশিকাবৃত্তি এবং পতঞ্জলি দিয়েছেন। বহু প্রাচীন দেবীমূতির গায়ে যজ্ঞোপবীত দেখতে পাওয়া যায়, আজও দুর্গোৎসবে দুর্গা, লক্ষ্মী ও সরস্বতীকে যজ্ঞোপবীত ধারণ করানো হয়। খৃষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীতেও বাণভট্ট মহাশ্বেতার বর্ণনা করতে গিয়ে তাঁর ‘ব্রহ্মসূত্রের দ্বারা পবিত্রীকৃতকায়ার’ উল্লেখ করেছেন। ঐতরেয় আরণ্যকের রচয়িতা মহিদাসের মা ইতরাকে নীচজাতীয়া ব'লে তাঁর ঋষি পিতা সম্মান দেন নি, উপযুক্ত পুর মায়ের সেই অপমানের প্রতিশোধ দিয়েছেন পিতার উল্লেখ না করে নিজেকে ইতরার পুত্র ব'লে পরিচয় দিয়ে; তাঁর বাল্যশিক্ষার গুরু ছিলেন তাঁর অনাদৃতা মা। গৃহস্থদের সে যুগে পত্নীকে বাদ দিয়ে কোনো ধর্মকার্য করবার উপায়ই ছিল না, শাস্ত্রাদেশ ছিল “সস্ত্রীকো ধর্মমাচরেৎ”। কৌশল্যা সে যুগের অন্যান্য প্রধানা রাজমহিষীদের মতো রাজা দশরথের যজ্ঞাংশভাগিনী ছিলেন।