পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/২৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাহিত্যে নারী : স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি
২৬৩

বিলুপ্ত করেই দিয়েছেন। বৈদান্তিক সন্ন্যাসীরা তো ভূত ছাড়াবার মন্ত্রোচ্চারণের মতই;—'নার্য্যা পিশাচ্যা’ ‘দ্বারং কিমেকং নরকস্য নারী’ ‘প্রাণভৃতা শৃঙ্খলা’ প্রভৃতি কটূ-কাটব্যের শেষই রাখেন নি। তাঁরা তা’ না করবেনই বা কেন? মাতৃত্যাগী, কুমারসন্ন্যাসীর পত্নীর প্রেম ও পুত্রীর শ্রদ্ধা লাভ না করে, প্রলোভিকার পরিচয়ই হয়ত জীবনে একমাত্র পেয়ে থাকবেন, কিন্তু গৃহী-ঋষিরা বা বৈদিক আচার্য্যেরা রীতিমত নারী-পূজা মাতৃ-পূজার সাধনা করে গেছেন। বেদের সমস্ত কর্মকাণ্ডের মধ্যে আজও তা’ স্পষ্ট হয়ে থেকে হিন্দুর ‘সমাজ’ ‘ধর্ম’ নিয়ন্ত্রণ করছে। মানুষের জীবনে নারীর প্রয়োজনীতা ও সাহচর্য্য যে অবশ্য প্রয়োজনীয়, সে কথা তাঁদের প্রবর্তিত সমুদয় গার্হস্থ্য বিধানে ও আইনে কোথায়ও তাঁরা এতটুকু বিস্মৃত হননি। “স্ত্রিয়ঃ সমস্ত সকলা জগৎসু”—মহাপ্রকৃতিকে এইরূপে বিশ্লেষণ করে গার্হপত্য স্থাপয়িতারা তাঁকে “যা দেবী সর্ব্বভূতেষু মাতৃরূপেণ সংস্থিতা” বলে সভক্তি বন্দনা করেছেন। তাঁদের মতে “গৃহিণী গৃহমুচ্যতে”, তাঁদের মতে পত্নী পতির শুধু সহধর্মিণীই নন, তিনি,—“গৃহিণী সচিবঃ সখী মিথঃ প্রিয়শিষ্যা ললিতে কলাবিধৌ।”

 তাঁরা বলেছেন: সতী স্ত্রীর এত তেজ যে, দুর্বৃত্ত স্বামীকেও,

“ব্যালগ্রাহী যথা ব্যালান্ বলাদুদ্ধরত বিলাৎ।
তদবৎ পতির মাদায় স্বর্গেণ সুখমেধতে।”

 সাপুড়ে সাপকে যেমন গর্ত থেকে টেনে বার করে, তেমনি করে তাঁকে অধর্ম থেকে উদ্ধার করতে সমর্থ। নারীকে তাঁরা বাল্যে, কৈশোরে, যৌবনে, প্রৌঢ়ে, বার্ধক্যে কোন অবস্থায় নিরাত্মীয়