পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/২৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৭০
সাহিত্যে নারী : স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি

“পরিপাণ্ডু দুর্বল কপোল সুন্দরম্, দধতী বিলোলকবরীকমাননম্,
করুণস্য মূর্তিরথবা শরীরিণী, বিরহব্যথেব বনমেতি জানকী।”

 কবি তমসার মুখে অটুট রাজধর্মপরায়ণ, প্রজারঞ্জনার্থ পত্নী-ত্যাগী শ্রীরামচন্দ্রকে ইক্ষ্বাকু বংশীয় রাজা বলেই অভিমানভরে সীতার কাছে উল্লেখ করেছেন, এ'ও যেমন স্বাভাবিক, আবার মেঘনিনাদে উৎকণ্ঠিত ময়ূরীর মত শ্রীরামচন্দ্রের কণ্ঠস্বর শুনে উচ্চকিত সীতা দেবীর কণ্ঠোচ্চারিত, “আমি কণ্ঠস্বরেই বুঝিয়াছি আর্য্যপুত্রই কথা কহিতেছেন!” এই নিরভিমান সম্বন্ধ স্বীকারসূচক বাক্যও তেমনই তাঁরই পক্ষে অত্যন্ত স্বাভাবিক হয়েছে। এখানে মানবচিত্তবৃত্তিতে অভিজ্ঞ কবি অতি সুন্দর দুটি ভাব প্রকাশ করে দেখিয়েছেন, প্রেমাস্পদের পদধ্বনি কণ্ঠস্বর অন্যের কাছে তুচ্ছ হলেও প্রেমিকার পক্ষে যতদিনেরই অদর্শন হোক, অতি পরিচিতই থেকে থাকে। আর একটি প্রকৃত উচ্চমনা আর্য্যমহিলার চরিত্রিক অভিজ্ঞতা তাঁর লেখায় দেখা যায়, সেটী এই, পতিগতপ্রাণা উদারহৃদয়া ক্ষমাশীলা সতী পতির প্রতি যতই অভিমান পোষণ করুন না কেন, তাঁর সঙ্গে নিজ সম্বন্ধ এক মুহূর্তের জন্যও ভুলতে পারেন না। অবচেতন চিত্তের মধ্যে নিজের অজ্ঞাতসারে গভীর ভালবাসার বারিধি পোষণ করে বসে থাকেন।

 এতটুকু ধ্বনিতেও সেখানে প্রতিধ্বনি জেগে ওঠে, তরঙ্গহিল্লোল প্রবাহিত হয়।

 এর পর যখন তমসার মুখে ‘ইক্ষ্বাকু বংশীয়’ ইত্যাদি শুনলেন, তখন যেন তার সহসাই মনে পড়ে গেল, হ্যাঁ, তা বটে, তাঁরও ত’ ওই লোকটির প্রতি নিগুঢ় অভিমানের যথেষ্ট কারণ বর্তমান