পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/২৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাহিত্যে নারী : স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি
২৭৭

কিশলয়শ্যামা সুন্দরী, এই গণিকাকন্যা মাতাকর্তৃক পুরুষাস্তর ভজনে আদিষ্টা হলে উত্তর দেন;—“মা যদি আমার বেঁচে থাকা চান, তবে এমন কথা যেন আর না বলেন।” বসন্তসেনা চারুদত্তকে ভালবাসে, সে অপবিত্র কুলে জন্ম নিলেও সুপবিত্রা। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর কতকগুলি বিখ্যাত উপন্যাসের মধ্যে যাদের বহুতর চিত্র দিয়েছেন, সেই ‘সতী-অসতী'দের আদি জননী হলেও নিজস্ব গুণে এই বসন্তসেনা একটি অনবদ্য নারী চরিত্র।

 “আকরে পদ্মরাগানাং জন্ম কাচমনেঃ কুতঃ” এই প্রবাদ বাক্যকে ব্যর্থ করে পঙ্কোত্থিতা পঙ্কজিনীর মত সে বিকশিত ও সুরভিত হয়ে আছে। কিন্তু না! তাই বা বলি কি করে?

 বসন্তসেনার মা ব্যবসার দিক দিয়ে কন্যাকে উৎসর্গ করতে অনিচ্ছুক না থাকলেও তার চিত্তবৃত্তির দিকে একটুও উদাসীন ছিল না, তার কয়েকটি কথার মধ্য দিয়েই তা প্রকাশ পেয়েছে। এমন কি নিজের অসাধারণ রূপগুণবতী লোক ললামভূতা দুহিতার হত্যাপরাধে ধৃত চারুদত্তকে বিচারালয়ে দেখে বলে উঠেছে “আমার কন্যা উপযুক্ত পাত্রেই হৃদয়দান করেছে।”

 তাঁকে নিজকন্যার হত্যাপরাধ থেকে বাঁচাবার জন্য বসন্তসেনার অঙ্গচ্যুত অলঙ্কারগুলি চিনতে পেরেও না চেনার ভাণ করেছে এবং বিচারককে সুস্পষ্ট বলেছে;—“আমার কন্যার জন্য আমারইত বাদী হ’বার অধিকার, আমি এই মামলা পরিচালনা করতে চাই না, চারুদত্তকে মুক্তি দিন।”

 পরিশেষে সেই দীর্ঘশ্বাস;—“বাছারে আমার!”—অপূর্ব এবং বিচিত্র। একেই বলে চিত্রণ! কত ক্ষুদ্রের মধ্যে তুচ্ছের মধ্যে কত বড় বড় প্রাণ যে লুকান রয়েছে, তাদের সেই গোপনতা