পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাহিত্যে নারী : স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি
১১

সত্যবানের সঙ্গে এবং সর্বোপরি যমের সঙ্গে শাস্ত্রীয় তর্কে নিজের পাণ্ডিত্যের পরিচয় দিয়েছিলেন। পাতিব্রত্যের জন্য তিনি আজও ভারত নারীর কাছে প্রাতঃস্মরণীয় হয়ে আছেন, কিন্তু তাঁর পাণ্ডিত্য এবং বিচারবুদ্ধির কথা আমরা ভুলে গেছি। বিদর্ভ-রাজদুহিতা দময়ন্তীর অসামান্য সাহস এবং অনন্যদুর্লভ বুদ্ধিমত্তা না থাকলে তিনি নলকে ফিরে পেতেন কিনা সন্দেহ। সে যুগের রাষ্ট্রীয় মন্ত্রণা-সভায় পরামর্শ দেবার জন্যও বিদুষী নারীদের ডাক পড়ত, মহাপ্রজ্ঞা গান্ধারী, ধীমতী দ্রৌপদী প্রমুখ তত্ত্বজ্ঞ বুদ্ধিমতী নারীরা সেখানে পুরুষশ্রেষ্ঠ রাজনীতিজ্ঞ রাজগণকেও কর্তব্যনির্ধারণে সহায়তা করতেন এবং সদুপদেশ দিতেন। তাঁদের জন্য সভায় স্বতন্ত্র আসন রাখা থাকত (আদি, ১৩৪,১১)। কূটনীতি বিষয়ে দ্রৌপদী যুধিষ্ঠিরকে এতই উপদেশ দিয়েছিলেন, যে তাঁর বিশ্বাস দাঁড়িয়েছিল, ‘শুক্রাচার্য ও বৃহস্পতির বুদ্ধিও স্ত্রীবুদ্ধি অপেক্ষা প্রশংসনীয় নয়। তাঁরা নিশ্চয় মেয়েদের বুদ্ধির প্রয়োগ-কৌশল দেখেই অর্থশাস্ত্র লিখে গেছেন।’ রাজনীতি সে যুগের ক্ষত্রিয় বীরপত্নীদের অবশ্য শিক্ষণীয় ছিল বলেই মনে হয়। মহাভারতের উদ্যোগপর্বে বহুশ্রুতা দীর্ঘদর্শিনী সৌবীররাজপত্নী বিদুলার কথা আছে। তাঁর স্বামীর মৃত্যুর পর রাজ্য অরক্ষিত দেখে সিন্ধুরাজ সৌবীররাজ্য কেড়ে নেন, বিদুলার শান্তশিষ্ট ছেলেরা তাঁর সঙ্গে যুদ্ধে জয়লাভ সম্ভব নয় জেনে নিশ্চেষ্ট রয়েছে দেখে বিদুলার সহ্য হচ্ছে না, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রাণাধিক পুত্রদের রণক্ষেত্রে পাঠাবার জন্য তিনি মরীয়া। এই তেজস্বিনী নারীর বজ্রগর্ভ বীরবাণী চিরদিনের ভীরুর জন্য অপমানিতের জন্য নিত্যকাল ধ্বনিত হচ্ছে,