পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/৩১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী
২৯৭

 অষ্টাদশ শতাব্দীর কবিগণের মধ্যে ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর স্বনামধন্য। পৌরাণিক, ঐতিহাসিক সকল প্রকার ছবিই তিনি এঁকেছেন। বঙ্গবীর প্রতাপাদিত্যের উত্থানপতন, নদিয়ারাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ভবানন্দ মজুমদারের কাহিনী, শিব-শক্তির সম্মিলন গাথা থেকে অতি কুৎসিত নর্ম-সাহিত্যের মধ্য দিয়ে নারীপুরুষের জঘন্য স্বেচ্ছাচার সমস্তই তিনি নির্বিকারচিত্তে নির্বিচারে বঙ্গভারতীর পদপ্রান্তে প্রদান করেছেন। বহু দেবী ও মানুষীচিত্রই তিনি দোষে গুণে এঁকেছেন। অতি মধুর ভক্তিরসাত্মক সঙ্গীত ও তাঁর অনেকগুলি আছে।

 ভারতচন্দ্রের মধ্যে ভাষার ওস্তাদি যে পরিমাণে ছিল, মৌলিক চরিত্র সৃষ্টির শক্তি সে পরিমাণে ছিল না। বড় আদর্শ সৃষ্টি করতে না পারলেও তিনি বাংলার আদর্শ জননী মেনকাকে, আদর্শ যোগী শিবকে অনেকখানি ছোট করেছেন। যথা মেনকা;—

“ঘরে গিয়ে মহাক্রোধে ত্যজি লাজ ভয়,
হাত নাড়ি গলা ছাড়ি ডাক ছেড়ে কয়;
ওরে বুড়া আঁটকুড়া নারদ অল্পেয়ে!
হেন বর কেমনে আনিলি চক্ষু খেয়ে?”

 পড়িলে আমাদের চিরপরিচিত “যাও যাও গিরি আনিতে গৌরী”-র মেনকাকে যেন ভুলে যেতে হয়। ভবানন্দ পত্নীদের বর্ণনায় পূর্ববর্তী কবিকঙ্কনের ছাপ পড়েছে। সেই দু-মুখোসর্পরূপিণী দাসীর কুমন্ত্রণা দুর্বলাকে মনে পড়িয়ে দেয়। বাঙ্গালীর ঘরের দুঃখের ছবি, বাঙ্গালীর মেয়ের রুদ্ধ অন্তরবেদনা তাঁর বর্ণনায় হরপার্বতীর গার্হস্থ্যচিত্রে, নারীগণের পতিনিন্দায় সুন্দর-