পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/৩২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩০২
সাহিত্যে নারী : স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি

 এমন সব কত চির-আগমনীর গানে গানে কন্যা মিলনাকাঙ্ক্ষায় ব্যাকুল জননীদের অভিব্যক্তি ও উদগ্রীব জনকের প্রতীক্ষা শারদাকাশে চিরপ্রতিধ্বনিত হ'য়ে এসে আজও মাতৃজাতির অন্তরকে বিমথিত করছে, সে শুধু ‘মা হওয়ায় জ্বালা' যাদের ঘটেছে তারাই জানে!

“কই সে গিরি কই সে আমার প্রাণের নন্দিনী।
সঙ্গে তব অঙ্গনে কে’ এলো রণরঙ্গিনী?”

 শুনলে মনে হয় যেন পল্লীবাসিনী মায়ের সামনে রুজলিপষ্টিক-স্নো-পাউডারে ছোপান, ‘বব্’ করা, ছাগলাদ্য-জুতার হিলে দীর্ঘাকৃতা, টান জর্জেটসাড়ী গায়ে লপটানো, সহরের সবচেয়ে ফ্যাশনেবল মহিলাটি এসে দাঁড়িয়েছেন! অথবা ঐ চক্রবেড়ে সাড়ির পরিবর্তে চরম আধুনিকার মত সট সার্টই বা পরে এসেছেন! তা মেয়ে যে বেশেই আসুক মায়ের বুকে এলেই হোল। প্রথমটা একটু চমকানি লাগবেই ত! কিন্তু ‘তারা-হারা’ হয়ে মায়ের ‘নয়নতারা’ ওযে অন্ধ হয়ে যেতে বসেছে। আবার তাইকি মায়ের প্রাণে স্বস্তি আছে, জামাইয়ের রকম-সকম কোন দিনই ত ভাল নয়, পাঁচজনায় পাঁচ কথা বলতে ত ছাড়ে না; কেঁদে গিয়ে পতিকে নালিশ করেন;—

“এই খেদ হয়, সকল লোকে কয়, শ্মশানবাসী মৃতুঞ্জয়।
যে দুর্গা নামে দুর্গতি খণ্ডে, সেই দুর্গার দুর্গতি একি প্রাণে সয়?
লম্বোদর নাকি উদরের জ্বালায় কেঁদে কেঁদে বেড়ায়,
হয়ে ক্ষুধার্ত্তিক সোনার কার্তিক লুটায় ধূলায়।”

 তাই মেয়ে আসতে অন্তরে ভরা দুর্বিষহ সন্দেহ জ্বালা হঠাৎ প্রকাশ করে ফেলেন;—