পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪
সাহিত্যে নারী : স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি

সে শুধু মাতার প্রতি পুত্রের কর্তব্যবোধে নয়, তাঁদের বিদুষী এবং তেজস্বিনী মা আশৈশব পিতৃহীন তাঁদের পিতার মতোই শিক্ষা দিয়েছিলেন এবং নিজগুণে তাঁদের অকৃত্রিম শ্রদ্ধা আকর্ষণ করেছিলেন। তিনি একদিকে বেদজ্ঞা, বৈদিক মন্ত্রে দীক্ষা নিয়ে যজ্ঞে যথারীতি সোমপান ক'রে বৈদিক যুগের নারীর মতো তাৎকালীন লোকাচারকে অগ্রাহ্য করে স্বীয় অধিকার খ্যাপন করেছিলেন, অপরদিকে ক্ষত্রিয় বীরনারীর মতো ধর্মযুদ্ধে প্রাণপ্রিয় সন্তানদের মৃত্যুমুখে পাঠাতে দ্বিধা করেন নি। পরপুত্রের প্রাণ রক্ষার জন্য নিজ পুত্র ভীমকে বক-রাক্ষসের মুখে প্রেরণ করেছিলেন। ভারত-যুদ্ধের প্রাক্কালে বনচারী যুধিষ্ঠিরের কাছে এই বলে সংবাদ পাঠিয়েছিলেন, “ক্ষত্রিয় নারীরা যে জন্য পুত্র প্রসব করে, তার সুসময় উপস্থিত হয়েছে।” বৈদিক এবং পৌরাণিক যুগে বহু ঋষিপত্নী তপস্যার এবং পাণ্ডিত্যের জন্য জনসাধারণের প্রণম্য হয়েছিলেন, তাঁদের সকলের নাম করা এবং পরিচয় দেওয়া। এখানে সম্ভব নয়। ধর্মপ্রাণ, পতিব্রতা প্রভৃতিরূপে তাদের কারো কারো কথা অন্যত্র বলব। ধর্মনীতির ক্ষেত্রে যাদের মহত্ত্ব সর্বজনস্বীকৃত তাঁরা ছাড়া রাজনীতির ক্ষেত্রে দূত হিসাবে নারীর নৈপুণ্য প্রাচীনকাল থেকেই দেখা যায়। সরমা ইন্দ্রের দূতী হয়ে পণি’দের কাছে গেছলেন, তাদের গরুগুলি আদায় করবার জন্য। তাঁর দৌত্য অবশ্য সফল হয়নি। এই যুগেই গায়ত্রী ‘সোম’ আনতে গিয়ে অসমর্থ হলে সরস্বতী গন্ধর্বদের ছলনা ক'রে ‘সোম’ হরণ করে এনেছিলেন। পরবর্তী যুগে রাজনৈতিক প্রয়োজনে এবং গুপ্তচরের কাজে নারী কর্মচারী নিয়োগ অর্থশাস্ত্রের বিধানের মধ্যেই দাঁড়িয়ে গেছল।