পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/৩৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৩২
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী

নিবদ্ধ আছেন। এইখানে সুরেন্দ্রনাথ মজুমদারের মাতৃনামের কবিতার দুটি লাইন তুলে দিলাম,—

“ত্রাসে ক্ষোভে শোকে দুঃখে, আগে নাম উঠে মুখে,
কিবা একাক্ষরী নাম মানবতারণ!
যার শব্দে যমচরে, নিকটে আসিতে ডরে,
এ ভব অশুভঘন, বিপদবারণ।”

 এই জিনিসটি পাশ্চাত্যসাহিত্যে আমরা খুব বেশী দেখতে পাই না। তবে শোপেনহাউয়ার বলেছেন;—“She pays the debt of life not by what she does, but by what she suffers’’.

 গর্কীর “মাদারে” মাতৃচরিত্র অনবদ্য; কিন্তু ভারতীয় মাতৃচরিত্র অধিকতর উদার।

 ইবসেনের “ডলস্‌ হাউসে’’র নায়িকা নোরা স্বামীর রোগের সময় ঋণ করে, জাল করে অর্থ সংগ্রহ করে তাকে বাঁচিয়ে তুলেছিল, কিন্তু পরে সেই স্বামীই যখন তাকে অপমান করলে, তখন এক মুহূর্ত্তে তার স্বামীপুত্রের সংসার খেলাঘর বলে মনে হ’ল, সে সব ছেড়ে দিয়ে চলে গেল, স্বামীর শত অনুরোধেও তাঁর আদর্শ-বিচ্যুতির পর আর তার পক্ষে স্বামীর ঘর করা সম্ভবপর হ’ল না। তাঁর আর এক প্রসিদ্ধ নারীচরিত্র “গোষ্ঠস” (প্রেতগণ) নাটকের মিসেস অ্যালভিং অসচ্চরিত্র স্বামীর হাতে আজীবন অপমান এবং লাঞ্ছনা সয়ে নিজেকে বলি দিলেন ছেলের মুখ চেয়ে, সেই ছেলেও শেষে চরিত্রহীন এবং পাগল হ’ল, মায়ের চিরজীবনের স্বার্থত্যাগ বৃথাই গেল। আমাদের কাছে,—অন্ততঃ আমাদের চোখে তিনিই আদর্শ-জননী পদবাচ্যা।