পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/৩৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৩৪
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী
৩৩৪

প্রায়শ্চিত্তকারিণী নারীদের প্রতি যথেষ্ট সহানুভুতির সঙ্গেই ইহা সৃষ্টি হয়েছিল। এইটি এবং তাঁর নবনাটক মৌলিক রচনা; তা ছাড়া রত্নাবলী, বেণীসংহার, মালতীমাধব, শকুন্তলা প্রভৃতি সংস্কৃত হতে অনুবাদ তাঁর আরও কয়েকটি নাটক আছে।

 মাইকেল মধুসূদনের নারীচরিত্রে গ্রীক সাহিত্যের প্রভাব থাকলেও তাঁর সীতা আমাদেরই চিরন্তন সীতা দেবী। সরমা সমদুঃখী কোমলহৃদয়া, ধর্মভীরু একটি সুপরিচিতা ঘরণী; প্রমীলা মহাভারতের নারীরাজ্যের অধীশ্বরীরই ছায়া দিয়ে গড়া কায়ামূর্তি;—‘‘আমি কি ডরাই সখি ভিখারী রাঘবে” বলে আমাদের সামনে এসে দেখা দেন, আবার পতির দেহান্তে প্রতিশোধস্পৃহা বিসর্জন দিয়ে পতিশোকাকুলা সাধারণ ললনার মতই পতি-চিতানলে প্রাণরিসর্জনও করেন। নারীরাজ্যের একচ্ছত্রা রাণী মহাভারতের প্রমীলাও অর্জ্জুনকে দেখামাত্র বীরাঙ্গনা-ধর্ম বিসর্জন দিয়ে তাঁকে পতিত্বে বরণ করতে আবেদন পেশ করলেন। চিরন্তনী নারী বর্মচর্মের ভিতর থেকে এক মুহূর্তে বেরিয়ে এল! তাঁর ‘‘শর্মিষ্ঠা” ও “কৃষ্ণকুমারী নাটকে”, “তিলোত্তমাসম্ভবকাব্যে”, “একেই কি বলে সভ্যতা” এবং “বুড়োশালিকের ঘাড়ে রোয়াঁ” প্রহসনদ্বয়ে, “ব্রজাঙ্গনা” এবং “বীরাঙ্গনা” কাব্যদ্বয়ে বহু বিচিত্র ধরণের নারীচিত্রের সাক্ষাৎকার পাওয়া যায়। বীরাঙ্গনা কাব্যই মাইকেলের পূর্ণ প্রতিভার বিকাশের দৃষ্টান্তস্থল। যেমন চন্দ্রের পাশে নক্ষত্র শোভা পায় সেইমত বৈষ্ণব-প্রেমগাথা সম্বন্ধে বিদ্যাপতি চণ্ডীদাস, গোবিন্দ দাস, জ্ঞানদাসের পার্শ্বে মধুসূদনও “ব্রজাঙ্গনা” লিখে চিরদিন সমুজ্জ্বল থাকবেন।