পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/৩৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি
৩৬১

গোবিন্দলালকেই সে তার চিত্তপ্রাণ সতীলক্ষ্মীর একনিষ্ঠ প্রেমের মতই একান্তভাবে সমর্পণ করেছিল,—যেমন এই রোহিণী- রূপেরই উত্তরকালের অভিব্যক্তি “চোখের বালি”র বিনোদিনীর বিহারীর প্রতি প্রেমের প্রত্যাখ্যানে মহেন্দ্রকে আশ্রয় করা। “চরিত্রহীনে” কিরণময়ীর তদপেক্ষা বীভৎসতর প্রতিশোধ প্রচেষ্টায় প্রকাশ পেয়েছে। রোহিণীরও নিশাকর সম্ভাষণে এবং প্রাণভিক্ষায় দেখা যায় সেও তার প্রথম প্রেম হরলালের কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার প্রতিহিংসাবশেই যেন তাদের সংসারের চালাঘরের চালের উপর অগ্নিস্ফুলিঙ্গ রূপে আপতিত হয়েছিল।

 শৈবলিনী-চরিত্রে অস্বাভাবিকতা দৃষ্ট হলেও নারীর মধ্যেও যে যথেষ্ট ধ্বংসকারী শক্তি নিহিত থাকে তা আমাদের কাছে শুধু কাব্যনাট্যের মধ্য দিয়েই নয়, সংসারক্ষেত্রেও বহুবার প্রকটিত হয়েছে। “সুন্দরী” সত্যই সুন্দরী! রূপের কথা বলছি না, গুণের কথাই বলছি। আর একটি অনবদ্য ছবি কয়েকটা মাত্র রেখা দিয়ে “চন্দ্রশেখরে” বিচিত্র হয়ে উঠেছে; সে বঙ্গের শেষ স্বাধীন নবাব হতভাগ্য মিরকাশিমের একটি ক্রীত-বেগম ক্ষুদ্র দলনীর মধ্য দিয়ে। বহুপত্নীক নবাব-হারেমের ক্ষুদ্র একটি প্রান্তের ছোট চামেলী লতাটা তার স্নিগ্ধ সৌরভে আজও যেন। পাঠকের মনকে সুরভিত করে রেখেছে; ছোট্ট চামেলি ফুলটির মতই তারও সেই রকমের ক্ষীণ আয়ু। উড়িষ্যার কবি রাধানাথ রায়ের “পত্রাবলী”তে মীর কাশিমের উদ্দেশ্যে লিখিত দলনীর পত্রের শেষ কথা;—

 “দলনীর প্রাণ,—দলনীর আঁখি আলো আঁধারে ডুবিয়া যাবে।”

O.P. 92-96