পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/৩৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী
৩৬৭

হয়। এই নাটকে নারীচরিত্রের চেয়ে হেমচাঁদ, নদেরচাঁদ, শ্রীনাথ প্রভৃতি পুরুষচরিত্রগুলিই বেশী জীবন্ত এবং তদানীন্তন সমাজের নাকি ফটোচিত্রের মতই বাস্তব।

 প্রথম যুগের বঙ্গরঙ্গমঞ্চ স্থাপনকর্তাদের মধ্যে অন্যতম প্রধান কর্মী নগেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের “সতী কি কলঙ্কিনী’’র একটি গান, “চল চল সবে মোরা ত্বরায় যাই লয়ে বারি” একদা জনসমাজে খুব বেশী প্রচলিত ছিল। তাঁর “পারিজাতহরণে’’র রুক্মিণীচরিত্র মূলানুগত হলেও সুন্দর ফুটেছে। রুক্মিণীর গীত; ‘‘যাও হে সেখানে তোমার মন যারে চায়” এ-গানটীও আমরা পথের পথিক, নৌকার মাঝিকেও গাইতে শুনেছি, যেমন নিধুবাবুর টপ্পা বা পরবর্তী যুগের “নন্দবিদায়”, “প্রভাসমিলন” প্রভৃতির গানগুলি সর্বত্র গীত হ’ত।

 রাজকৃষ্ণ রায়ের গ্রন্থাবলীতে পৌরাণিক, সামাজিক বহুবিধ নারীচরিত্রের সাক্ষাৎ মেলে, বিশেষত্ব বলবার মত কিছু নেই।

 অমৃতলালের নাটক সে-দিনে বঙ্গ-রঙ্গমঞ্চের প্রবল আকর্ষণ সৃষ্টি করেছিল, সে-কথা এখনও লোকে বিস্মৃত হয় নি। তাঁর ক্রম-পরিবর্তিত বঙ্গসমাজের ব্যঙ্গচিত্র ও সরস ব্যঙ্গরস সৃজনশক্তি যে অপরিমেয় ছিল তা’ অস্বীকার করা চলে না। হয়ত কোথাও অত্যুক্তিবাদ এসে পড়তে পারে, কিন্তু তা’তে দোষ দে’বার কিছু নেই। অতিপ্রাকৃত বা অপ্রাকৃত এ-সমস্তই নাট্যকলার অঙ্গ। তাঁর “তিলতর্পণ” নাটকে যখন বাপ্পা-মহিষী তাঁর মহামহিম স্বামীর “আমি রাণা বাপ্পারাও বীরচূড়ামণি” ইত্যাদি বাহ্বাস্ফোটের সঙ্গে ‘‘আলিবর্দী নিপাতে’’র প্রতিজ্ঞা শুনছেন, তখন সহসা কান্না-সুরে তাঁর ‘মহারাজ, আমি পা রাখি কোথায়?”