পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/৪০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৮০
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী

“জেনে রেখো ভায়া নারী আসিয়াছে জগতে কি কাজ সাধিতে।
পরিতে বোম্বাই সাড়ী বেনারসী”..ইত্যাদি।

আবার এঁরা দু’জনেই মহীয়সী নারীচিত্রও নিতান্ত অল্প আঁকেন নি।

 নজরুল ইসলামের অমর কাব্যকথার মধ্যে বাস্তব নারীর খুব বড় ও খুব ছোট বহু পরিচয় না পেলেও তাঁর আদ্যানারীর যে সমস্ত বন্দনাগীতি আমরা শুনেছি, যদি সত্য করে তার মর্ম গ্রহণ করতে পেরে থাকি, তাহলে ‘স্ত্রিয়ঃ সমস্ত।” সেই পূজাতেই পূজা পেয়েছেন ভাবতে পারেন। তাঁর “দুর্গমগিরি কান্তার মরু দুস্তর পারাবার’’ গানে যাত্রীগণকে উদাত্তকণ্ঠে আহ্বান জানিয়ে ‘‘বাঙ্গালীর খুনে লাল হ’ল যেথা ক্লাইবের খঞ্জর” সেই পলাশীর প্রান্তর দেখিয়ে বলেছেন “উদিবে সে রবি আমাদের খুনে রাঙ্গিয়া পুনরায় হে”; “অরুণ প্রাতের তরুণদল’’কে যে চলতে উৎসাহ দিয়েছেন সে ত’ নরনারীর ভেদ রেখে নয়? তাঁর “নারী” কবিতায় নারীজাতির একটা জীবন্ত চিত্র আমরা দেখতে পাই;—

“বিশ্বে যা কিছু মহান্‌ সৃষ্টি চির কল্যাণকর,
অর্ধেক তার নারী সৃজিয়াছে অর্ধেক তার নর।
বিশ্বে যা কিছু এল পাপ তাপ বেদনা অশ্রুবারি,
অর্ধেক তার আনিয়াছে নর, অর্ধেক তার নারী।
নরককুণ্ড বলিয়া যে তোমা করে নারী হেয় জ্ঞান,
তারে বল আদি পাপ নারী নহে, সে যে নর সয়তান।
এ-বিশ্বে যত ফুটিয়াছে ফুল, ফলিয়াছে যত ফল,
নারী দিল তাহে রূপ রস মধু, গন্ধ সুনির্মল।