পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাহিত্যে নারী : স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি
২১

দেখা যায়, যারা প্রকৃতই নিঃস্বার্থ এবং ধর্মবুদ্ধি দ্বারা প্রণোদিতা; তাই দেখি বিদুলা এবং কুন্তী সুপণ্ডিত হয়েও অধমকে দমন করবার জন্য পুত্রদের নররক্তপাতে উৎসাহিত করছেন, আবার অপর দিকে দেখি রাজরাণী মদালসা পুত্রদের ব্রহ্মবিদ্যা শিখিয়ে নির্মমচিত্তে বনে পাঠাচ্ছেন। ছোটোবেলায় রাজপুত্র বিক্রান্ত একবার প্রজার ছেলেদের সঙ্গে খেলা করতে গিয়ে মার খেয়ে এসেছিলেন। তিনি মায়ের কাছে নালিশ করলেন এবং প্রজার ছেলের রাজপুত্রের গায়ে হাত তোলার স্পধার জন্য শাস্তি দিতে বললেন। তাতে মদালসা তাকে বোঝালেন, “ভুলে যেও না তুমি শুদ্ধাত্মা। তোমার বিক্রান্ত নাম বা রাজপুত্র উপাধি প্রকৃত পদার্থ নয়, কল্পনামাত্র। রাজপুত্র ব'লে অভিমান করা তোমার সাজে না। আর যে দেহে আঘাত পেয়ে তুমি উত্তেজিত হয়েছ, সেই তোমার এই দৃশ্যমান শরীর পঞ্চভূত দিয়ে তৈরি, তুমি তো সে দেহ নও, তবে দেহের বিকারে তোমার কাঁদবার কি আছে?” এরকম মা আজকের দিনের বিদুষী নারীদের মধ্যে ক’জন আছেন জানতে ইচ্ছা হয়, আছেন কি?

 এর পর ঐতিহাসিক যুগের প্রারম্ভেও ভারতে বিদুষী নারীর অভাব ছিল না। বাৎস্যায়নের মতে, “পুরুষের মতো মেয়েরাও কবি হতে পারেন।” শাস্ত্রজ্ঞানসম্পন্ন রাজকন্যা মন্ত্রিকন্যা, কৌতুকি-ভার্যা এবং গণিকা তাঁর সময়ে অনেক দেখা যেত। তা তিনি স্বীকার করে গেছেন। চৌষট্টিকলার মধ্যে কাব্যচর্চা মেয়েদের শিক্ষার অঙ্গ এবং বৈদগ্ধ্যের পরিচায়ক ব'লে বিবেচিত হ'ত। এই যুগে এবং এর পরবর্তী যুগে বিদুষী