পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/৪১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৯৬
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী

“সিঁদুর কৌটা”র বকুলাবলিকা বা বকুরাণী আদর্শহিসাবে হয়ত খুবই বড়, সতীনারীর মহত্ত্বও হয়ত তাঁর অক্ষুন্ন আছে, মনুষ্যত্ব কতখানি রইল বলতে পারি না। সূর্যমুখী স্বামীর বিয়ে দিয়ে সেই স্বামীর ঘরে ঘর করতে পারেন নি। স্বামী-দর্শনে এসে ধরা না পড়লে ফিরেই যেতেন। স্বামীর উচ্ছৃঙ্খলতার প্রতিশোধে নিজের উচ্ছৃঙ্খলতা নিশ্চয়ই সতীধর্ম নয়; কিন্তু তা’তে প্রশ্রয়দানও তাঁর ধর্মবিধানের বহির্ভূত। পতিকে পাপ পথ থেকে নিবৃত্ত করাই সতীধর্ম, সেই পথ বাধামুক্ত করা আত্মত্যাগ হ’তে পারে; কিন্তু তাতে কর্ত্তব্যপালন হয় না, কর্তব্যের পথ ক্ষুরধার।

 রবীন্দ্র পরবর্তী যুগে সবচেয়ে খ্যাতিমান ঔপন্যাসিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। তাঁর গল্প-উপন্যাসগুলিতে বহু নারীচিত্র উজ্জ্বলবর্ণে অঙ্কিত হয়েছে। তাঁর ভাষার জোর ছিল, নিজের জীবনের বিচিত্রতা ও নূতনতর অভিজ্ঞতা ছিল, প্রতিভার সঙ্গে সহৃদয়তার মিশ্রণে তিনি অনেকগুলি জীবন্ত নারীচরিত্র সৃষ্টি করে গেছেন। পল্লীর প্রতি সহানুভূতি দেখাতে গিয়ে তিনি অনেক সময় পাপীকে প্রশ্রয় দিয়েছেন এবং অপরিণতবুদ্ধি যুবকসমাজকে ভ্রান্তপথে পরিচালিত করেছেন, এ কথা অস্বীকার করা যায় না।

 “কাশীনাথ” গল্পের কমলা সংসারে থাকতে পারে, ঐতিহাসিক ও বাস্তবচিত্রে পাওয়া যায়, সৌভাগ্যক্রমে সংসারে দেখিনি, তবে এরকম আসামীর কথা হয়ত শুনে থাকবো।

 “বড়দিদি”তে মাধবী-চরিত্র রহস্যাবৃত হলেও মানবীয় পরিচয়ের হিসাবে নিতান্ত অস্বাভাবিক বলা চলে না।