পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/৪৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪১৬
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী

মুকুল”, “মিবাররাজ”, “বিদ্রোহ”, “হুগলীর ইমাম বাড়ী”, “কাহাকে” প্রভৃতি তাঁর বহু উপন্যাসে নারীচরিত্রে নূতনত্ব খুব বেশী নেই। “ইমামবাড়ী”র “মুন্না” এবং “বিদ্রোহ”-এর “সেবন্তী” তথাপি বেশ জীবন্ত। তাঁর রচনার শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ “স্নেহলতা”; যদি বলা যায় যে আধুনিক বাংলাসাহিত্যে ঐ নারীরচিত উপন্যাসটীই সত্যকার ঘরোয়া চিত্রের নূতন একটা ধারা দেখিয়েছে তবে খুব অন্যায় দাবী করা হয় না। “স্নেহলতা”র পূর্ববর্তী উপন্যাস-সাহিত্য প্রায়শঃই ঐতিহাসিক ভিত্তিতে অথবা বিশিষ্ট ধনী পরিবারের আকস্মিক বিশিষ্ট ঘটনাসম্পাতের মধ্যবর্তী হয়ে জাত হয়েছিল। ঘরকরণার খুঁটিনাটির ব্যাপারও অপূর্ব সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতির বাইরেও হিন্দু গৃহস্থঘরের মানুষদের নিয়ে যে রীতিমত রোমান্সের সৃষ্টি করা চলে এ-দৃষ্টান্ত[১] “স্নেহলতা”ই সর্বপ্রথম বঙ্গসাহিত্যসেবীদের জানিয়েছে। অবশ্য বঙ্গসাহিত্যের আলোচনা করতে বসে কেউ এ সত্য এ পর্যন্ত স্বীকার করেননি। মেয়েদের সম্বন্ধে একটা নির্বিকারচিত্ততা এবং অজ্ঞতার ভান পূর্বাপরই দেখা যায়,[২] অবশ্য প্রথমকার দিকে উচ্ছ্বাসবাহুল্য একটু যে না ছিল, তা’ নয়।

  1. আলালের ঘরের দুলাল ও স্বর্ণলতায় একটু পুরনো দিনের মানুষদের দেখা পাই কিন্তু ওদুটীকে ঠিক রোমান্স বলা যায় না।
  2. ৺ললিতকুমার প্রভৃতি কয়েকজন নিরপেক্ষ সমালোচক ভিন্ন, বিশেষ করে আধুনিকরা ত তাঁদের সাহিত্য জগৎ থেকে নির্ব্বাসিতই করতে চান, এর কারণ কি পুরুষ সাধারণের স্বাভাবিক রক্ষণশীলতার অবচেতন মনের ছায়া হতে উৎপন্ন? দশের মধ্যে নারী সম্পর্কে আলোচনায় লজ্জিত করে? অথবা চিরন্তন পৌরূষ তাদের কাছে কোন ঋণ স্বীকার করতে কুণ্ঠিত হয়?