পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৮
সাহিত্যে নারী : স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি

এবং প্রজাদের ভালো লাগেনি। তারা রাজার কাছে রাজকন্যার নির্বাসন দণ্ড প্রার্থনা করে, নিরুপায় হ'য়ে রাজাও কন্যাকে নির্বাসন দণ্ড দেন। গৃহত্যাগের পূর্বে মালিনী প্রকাশ্য সভায় রাজ্যের সমস্ত পণ্ডিতকে তর্কে পরাজিত ক'রে নিজের মত প্রতিষ্ঠা করেন। তার পর গৃহে থাকবার জন্য তাঁকে আবার সকলে অনুরোধ করে, কিন্তু সে অনুরোধ তিনি রাখেন নি। সারনাথে গিয়ে তিনি ধর্মজীবন যাপন আরম্ভ করেন, তাঁকে কেন্দ্র করে তাঁরই চেষ্টায় দশ সহস্র ভিক্ষুণীর এক বিরাট সঙ্ঘ সারনাথে গড়ে ওঠে।

 ভগবান বুদ্ধের জীবিতকালে ভিক্ষু কুমার কাশ্যপ এবং তাঁর মা দুজনেই অর্হত্ব লাভ করেছিলেন। বুদ্ধদেব স্বয়ং বলেছেন— ‘ভিক্ষু-সঙ্ঘের মধ্যে কুমার কাশ্যপ সব চেয়ে বাকপটু; তাঁর মতো ধর্মব্যাখ্যা করতে কেউ পারত না। এই ভিক্ষুর মা ছিলেন রাজগৃহের এক ধর্মপরায়ণা শ্রেষ্ঠিকন্যা। শৈশবে তিনি প্রব্রজ্যা নিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু বাপ মা'র মত ছিল না বলে হয়নি। যৌবনে শ্বশুরকুলের সকলেই তাঁর গুণমুগ্ধ ছিল, তাঁদের বাধার জন্য প্রথমতঃ গৃহত্যাগ করতে পারেননি, কিন্তু তাঁর মনে শান্তি ছিল না। একবার পর্বদিনে বাড়ীর সবাই সাজসজ্জা করে উৎসবে মেতেছেন কিন্তু শ্রেষ্ঠিকন্যা প্রতিদিনের মতো সাধারণ সাজেই গৃহকর্মে লিপ্ত আছেন দেখে, তাঁর স্বামী প্রশ্ন করলেন, “তুমি যে সাজলে না?” শ্রেষ্ঠিকন্যা বললেন, “আর্যপুত্র, এই দেহ বত্রিশ রকম শবোপাদানে পূর্ণ, একে সাজিয়ে কি হবে? এ দেবনির্মিত বা ব্রহ্মনির্মিত নয়, স্বর্ণ, মাণিক্য বা হরিচন্দন দিয়েও তৈরি নয়, পদ্মযোনি বা অমৃত-