পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাহিত্যে নারী : স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি
৪৯

সম্ভব হয় না। বিদেশী আক্রমণে এবং গৃহবিবাদে বৌদ্ধ এবং হিন্দু বিদ্যাপীঠগুলির ধ্বংসের সঙ্গে সঙ্গে এই যুগের ধর্মপ্রাণ। লেখিকাদের নাম পর্যন্ত লুপ্ত হয়ে গেছে বলেই মনে হয়; রাজসভার সঙ্গে সংশ্লিষ্টা এবং অত্যধিক জনপ্রিয় নারী কবিদের সন্ধানই কেবলমাত্র আমরা বিভিন্ন ‘সুভাষিতাবলী’তে পাচ্ছি। যাই হোক্, যাদের কথা আমরা জানি, তাঁদের কবিত্বশক্তি, ভাবের গভীরতা এবং ভাষার মাধুর্য দিয়েই তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে তাঁদের মহত্ত্বের বিচার করবার চেষ্টা করব।

 পালিভাষার নারী-কবি ‘থেরী’দের কবিতা এবং পরবর্তী সংস্কৃতভাষার নারী-কবিদের কবিতার মধ্যে সব চেয়ে বড় তফাৎ, থেরীরা শুধু নিজেদের ব্যক্তিগত জীবন এবং ইহ-পারলৌকিক মুক্তি-প্রচেষ্টার ইতিহাসকেই তাদের লেখার বিষয়বস্তু করেছেন। অপরদিকে পরবর্তী যুগের নারীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে আত্মপরিচয় সম্পূর্ণ গোপন করে নানা বিষয়ে নানা বিচিত্র বর্ণনায় তাদের যুগের দৃষ্টিভঙ্গী এবং আশা আকাঙ্ক্ষার পরিচয় দিয়ে অতীত ভারতের একটা সর্বাঙ্গ সুন্দর উজ্জ্বল নারীরূপ অনাগত মানবের জন্য রেখে গেছেন। অনুদার গভীরতার এবং ঔদার্যপূর্ণ চাপল্যের পরিচয় এই দুই যুগের সাহিত্যের বিশেষত্ব ব’ললে অত্যুক্তি হবে না। এর মধ্যে আর একটা প্রধান দ্রষ্টব্য এই যে বুদ্ধ মহাবীর থেকে আরম্ভ করে শঙ্করাচার্য প্রভৃতি ভিক্ষু ও সন্ন্যাসীরা অনেক স্থলে নারীজাতিকে সমগ্রভাবে মুমুক্ষু পুরুষকে প্রলুব্ধ করার জন্য যথেচ্ছ অপবাদ দিয়েছেন, কিন্তু থেরীরা বা সংস্কৃত নারীকবির কারণসত্ত্বেও একের দোষে

O.P. 92—7