পাতা:সাহিত্য-মীমাংসা - বিষ্ণুপদ ভট্টাচার্য্য.pdf/১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্য-মীমাংসা আমাদের বর্তমান আলোচনার নাম সাহিত্য-মীমাংসা—ইংরেজী Literary Criticism শব্দের ইহা হুবহু প্রতিশব্দ । সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে সাহিত্যেরও অগ্রগতি হয় । যে জাতি বর্বরতার স্তর অতিক্রম করিতে পারে নাই তাহার সাহিত্য বলিতে কিছুই নাই। সাহিত্য সভ্যতার প্রতীক, এবং সাহিত্যের উন্নতি ও অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে সাহিত্যবিচারের ধারাও ক্রমশ সুস্পষ্ট আকার ধারণ করে । সাহিত্যের স্রষ্টা ও পাঠক, উভয় সম্প্রদায়ের মনেই স্বভাবত এই জিজ্ঞাসার উদয় হয়, সাহিত্য কি ? ইহার উদেশ্বই বা কি ? সাহিত্য-পাঠের প্রয়োজনীয়তা কোথায় ? কবিমনের উপাদান কি ? সাহিত্যের সহিত অন্যান্য শিল্প ও কলা, যেমন চিত্র, ভাস্কর্য, সংগীত, মাহীদের ভিতর দিয়া সভ্য মানব নিজেদের অন্তলোকের আনন্দ ও আদর্শ বাহিরের লোকচক্ষুর সম্মুখে প্রকাশিত করিয়া থাকে, তাহদের ভেদ কি ? এইরূপ শত শত জটিল প্রশ্নের সমাধানই সাহিত্য-মীমাংসা-শাস্ত্রের মুখ্য উদেশ্ব। ভারতের সভ্যতা বহু প্রাচীন। ইউরোপের বর্তমান সভ্য সমাজ যখন অরণ্যের গহন অন্ধকারে পশুশিকারে ব্যস্ত ছিল, আত্মরক্ষা ও শরীরধারণই ছিল যখন তাহাদের জীবনের প্রধান সমস্যা, তখন আমাদের এই প্রাচীন ভারতবর্ষে সভ্যতার প্লাবন বহিয়াছিল। বিজ্ঞানে চিকিৎসাবিদ্যায় ভাস্কর্যে চিত্রে দর্শনে সাহিত্যে শত ধারায় ভারতীয় সভ্যতা ভারতীয় আদর্শ আপনাকে প্রকাশ করিতেছিল। আজ সে প্লাবন আর নাই, সে সকল ধারা শুষ্ক। কিন্তু তখনকার সাহিত্য ও সাহিত্য-মীমাংসার প্রণালী বহু অপঠিত ও অনাদৃত পুথির মধ্যে লুকাইয়া আছে । আমরা তাহদের কোনও পরিচয়ই রাখি না। ইউরোপের সাহিত্যের উজ্জলতায় আমরা মুগ্ধ, আমরা একান্ত শ্রদ্ধার সহিত গ্ৰীক মনীষী আরিস্ততল এর সাহিত্য-বিশ্লেষণ শ্রবণ করিবার জন্য উৎসুক ।