পাতা:সাহিত্য-মীমাংসা - বিষ্ণুপদ ভট্টাচার্য্য.pdf/১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্য-মীমাংসা (t ধারণীর অভিব্যক্তি ঘটে। সংস্কৃত অলংকার-সাহিত্যের ধারা যাহারা নিপুণভাবে সমীক্ষা করিয়াছেন, র্তাহারা সকলেই এ কথা স্বীকার করিতে বাধ্য হইবেন । নাট্যশাস্ত্রের প্রবক্তা আচার্য ভরত হইতে আরম্ভ করিয়া একাদশ শতকের শেষভাগে মৰ্ম্মটাচার্য পর্যন্ত বিস্তৃত এই দীর্ঘ সাহিত্য-মীমাংসক-সম্প্রদায় কেবল পুরাতনেরই চর্চা করিয়া গিয়াছেন, এইরূপ কথা অনভিজ্ঞ সংস্কৃতবিদ্বেষীর মুখেই কেবল শোভা পায়। নূতন নূতন অলংকারগ্রন্থে নূতন নূতন প্রশ্নের উত্থাপন হইতেছে। ভরত যাহা জানিতেন না, ভামহ দণ্ডী উদ্ভট প্রভৃতি আচার্য তাহ লক্ষ্য করিয়াছেন, তাহার সমাধান দিবার চেষ্টা করিয়াছেন । প্রাচীনের দৃষ্টিতে যেখানে শব্দ অর্থ ও অলংকার ভিন্ন সাহিত্যের অন্য কোনও উপাদান ধরা পড়ে নাই, নবীন সাহিত্য-মীমাংসকগণ সেখানে সাহিত্যের আত্মার অনুসন্ধানে ব্যস্ত, বাহিরের আবরণ ভেদ করিয়৷ অন্তরের তত্ত্ব সাক্ষাৎ করিবার জন্য র্তাহারা ব্যাপৃত। প্রাচীনের যখন গুণ ও অলংকারের মধ্যে কোন ও ভেদ লক্ষ্য করিতে পারেন নাই, নবীন অলংকারিক সেখানে উভয়ের মধ্যে সূক্ষ্ম ভেদ দেখাইবার চেষ্টা করিয়াছেন। আজকাল যেমন সাহিত্যের উদেশ্ব সম্বন্ধে তুমুল বিবাদ উঠিয়াছে, তাহার সমাধানের কোনও কিনারা পাওয়া যাইতেছে না, আমাদেব প্রাচীন আচার্য সম্প্রদায়ের মধ্যেও এই জটিল সমস্যা লইয়া দীর্ঘ বিতণ্ড চলিয়াছিল, এবং তাহারা উহার যে সমাধান নির্দেশ করিয়া গিয়াছেন, আজও অমর। আমাদের মনোবিজ্ঞান-শাস্ত্রের নবলব্ধ সমীক্ষণপ্রণালী ও বিশ্লেষণনৈপুণ্য সত্ত্বেও তাহা অপেক্ষা অধিকতর সন্তোষজনক উত্তর দিতে পাবিয়ছি বলিয়া বিশ্বাস হয় না। কেবল, ভারতের অতীত অলংকারিক সম্প্রদায় ও বর্তমানের ইউরোপীয় সমালোচক সম্প্রদায়ের মধ্যে তফাত এইটুকু মাত্র যে, আমাদের প্রাচীন আচার্যগণ যেখানে অতি অল্প কথায়, সংযতভাবে সাহিত্যবিষয়ক দুরূহ সমস্যাসমূহের মীমাংসা করিবার চেষ্টা করিয়াছেন, তাহাদের শেষ উত্তর দিয়াছেন, আধুনিক সমালোচকগণ সেখানে বিস্তৃত মনোবিশ্লেষণের অবতারণা করিয়া সমস্যাগুলিকে আরও দুর্বোধ্য করিয়া