পাতা:সাহিত্য-মীমাংসা - বিষ্ণুপদ ভট্টাচার্য্য.pdf/২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্যের লক্ষণ SC: উপায় নাই যে, কাব্যপাঠের সময় শব্দের মনোহারিতার দিকেই পাঠকের এবং শ্রোতার হৃদয় উন্মুখ হইয়া থাকে। কিন্তু তাই বলিয়া কেবলমাত্র মধুর শব্দ পর পর গণথিয় গেলেই সাহিত্য সৃষ্টি করা যায়, এ কথা কোনও সাহিত্যসমালোচকই স্বীকার করিবেন না। জয়দেব শব্দচয়নে—আপাতদৃষ্টিতে— কালিদাসের অপেক্ষা অধিকতর নৈপুণ্যের পরিচয় দিয়াছেন, সংস্কৃত ভাষার অফুরন্ত ভাণ্ডার হইতে তিনি যত মধুর শব্দ বাছিয়া তাহার গীতিমাল্য গ্রথিত করিয়াছেন। তথাপি কালিদাসের মেঘদূত, রঘুবংশ, কুমারসম্ভবের সহিত জয়দেবের গীতগোবিদের তুলনা হয় না। রবীন্দ্রনাথের কাব্যগ্রন্থের সহিত সত্যেন্দ্রনাথের কাব্য-সঞ্চয়নের তুলন। হয় না। কেন ? ইহার একমাত্র সমাধান এই যে, কালিদাস ও রবীন্দ্রনাথের কাব্যগ্রন্থে শব্দ ও অর্থের চমৎকারিতা অনূ্যনানতিরিক্ত। শব্দ এখানে অর্থের সহিত তুল্যস্কন্ধ হইয়া প্রকাশ পাইতেছে । একটি অপরকে ছাপাইয়া উঠে নাই। মহাকবি কালিদাস তাহার ‘অভিজ্ঞানশকুন্তল নাটকে কশ্বশিষ্য শাঙ্গ রবের মুখ দিয়া দুৰ্যন্ত ও শকুন্তলাকে লক্ষ্য করিয়া বলিয়াছেন, “সমানয়ংস্কল্যগুণং বধুবরং চিরস্য বাচ্যং ন গতঃ প্রজাপতিঃ”—বিধাতা তুল্যগুণ মহারাজ দুষ্যস্ত ও আশ্রমপালিতা শকুন্তলাকে বধবররুপে সম্মিলিত করিয়া তিনি বিসদৃশ নরনারীর সম্মেলনের ঘটক চিরকালের এই অকীতি হইতে মুক্ত হইলেন। দাম্পত্য-পরিণয়ের ক্ষেত্রে বধুবরের অবস্থাসাম্য গুণসাম্য বৃত্তিসাম্য যেমন সকল দিক দিয়া বাঞ্ছনীয়, শব্দার্থ-পরিণয়ের ক্ষেত্রেও সেই একই নিয়ম। স্বর্ণকারদুহিতার সহিত কর্মকারতনয়ের বিবাহ কখনই স্ব ও মুখাবহ নহে। সংস্কৃত আলংকারিকগণ কাব্য-সংসারে কবিকে প্রজাপতির সহিত তুলন। করিয়াছেন, কোনও কোনও অংশে কাব্যস্রষ্টা কবির আসন বিশ্বস্রষ্ট। প্রজাপতির আসনের বহু উর্ধ্বে। সুতরাং কবিপ্রজাপতি যদি তাহার ১. “অপারে কাব্যসংসারে কবিরেকঃ প্রজাপতিঃ । যখান্মৈ রোচতে বিশ্বং তথৈব পরিবর্ততে ”—ধ্বস্কালোক ।