পাতা:সাহিত্য-মীমাংসা - বিষ্ণুপদ ভট্টাচার্য্য.pdf/৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্য ও রসতত্ত্ব ჯ, % কেন লৌকিক এবং অপরটি কি জন্যই বা অলৌকিক বলিয়। পরিগণিত হইবে ? সুতরাং ভট্টনায়ক বলেন যে, রস উৎপন্ন হয় না, অকুমিত হয় না ; উহা আত্মগতও নয়, আবার পরগতও নয় । যদি বল—রতি প্রভৃতি স্থায়িভাবের আস্বাদই রসাচুভূতি এবং ঐ সকল স্থায়িভাবের আধার শ্রোতা বা প্রেক্ষক স্বয়ং, তবে শুঙ্গাররসের অমুভবে যেমন সুখবোধ জন্মে, সেইরূপ, করুণরসের অমুভূতিস্থলেও অনুরূপভাবে দুঃখ অনুভূত হয় না কেন ? আমরা দুষ্যস্ত-শকুন্তলার প্রেমাভিনয় দর্শন করিয়া শৃঙ্গাররসের অনুভূতিবশে মুখে মগ্ন হই, কিন্তু ক্রৌঞ্চদ্বন্দ্বের বিপ্রয়োগদর্শন করিয়া করুণরসাচুভূতির ফলে দুঃখদগ্ধ হই ন কেন ? যদি শোক নিতান্ত আমারই হইত, তবে ক্ৰৌঞ্চপত্নীর মত আমিও দুঃখসন্তপ্ত হইতাম, অভিনয়দর্শনের সমস্ত আনন্দ মুছিয়া যাইত। আবার দশকের এইরূপ প্রতীতি ও জন্মে না যে, শকুন্তলা আমারই কাস্তা, সীতা আমারই পত্নী । যদিও বা সাধারণ নায়িকার স্থলে দর্শকের এইরূপ মমতাবোধ জন্মিতেও পারে বটে, তথাপি যেখানে পৌরাণিক দেবদেবী নাটকের নায়কনায়িকার স্থলাভিষিক্ত, সেখানে প্রেক্ষকের এইরূপ মমতাবোধ অসম্ভব, ত্ৰিভূবনপূজনীয়া দেবী পার্বতী কখনও সামাজিকগত রতিভাবের ‘আলম্বনবিভাব’ হইতে পারেন না । যে সকল পৌরাণিক কাহিনী বর্তমান সভ্যসমাজের বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গীতে অসম্ভব, যেমন রামায়ণকথায় হনুমান কর্তৃক সমুদ্রলঙ্ঘন, সেই সকল ব্যাপার যখন নাট্যে অভিনীত হয়, কিংবা কবি কর্তৃক তাহার কাব্যে বর্ণিত হয়, তখন প্রেক্ষক বা পাঠকের রস প্রতীতির তো কোনও বিঘ্ন উপস্থিত হয় না ? কিন্তু যদি সামাজিকগণের চিত্তে ব্যক্তিগত সংকীর্ণত ও . মমতাবোধ জাগ্রত থাকিত, যদি সে সমুদ্রলজঘন প্রভৃতি অলৌকিক চেষ্টাসমূহকে একান্তভাবে আত্মসম্বদ্ধভাবে অনুভব করিত, তবে তাহার ঐরুপ অবিসংবাদিত রসপ্রতীতি কখনই সম্ভবপর হইত না । সহৃদয় দশক কালিদাসের ‘অভিজ্ঞানশকুন্তলে’র অভিনয় দর্শন করিয়া যে শৃঙ্গাররসের “ভট্টনায়কত্ত্বাহ—’রসে। ন প্রতীয়তে, নোৎপদ্যতে'•••"—অভিনবভারতী, ১ম ভাগ જૂ. ૨૧,