পাতা:সাহিত্য-মীমাংসা - বিষ্ণুপদ ভট্টাচার্য্য.pdf/৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

e সাহিত্য-মীমাংসা অস্তভুক্ত হইবেই। সুতরাং ইহা স্বীকার না করিয়া উপায় নাই যে, কাব্যবর্ণিত অর্থসমূহ বিভাব অকুভাব প্রভৃতি চারিটি উপাদানের আকারেই সামাজিকের চিত্তে প্রতিভাত হইবে । কিন্তু লৌকিক কার্য কারণ এবং চিত্তবৃত্তি হইতে সাহিত্যিক বিভাবাদির বৈশিষ্ট্য কোথায় ? একটু চিন্তা করিলেই বুঝা যাইবে যে, লোকদৃষ্ট অথবা লোকবৰ্ণিত অর্থসমূহ দ্রষ্ট অথবা শ্রোতার নিকট হয় একান্ত স্বকীয়ভাবে নতুবা একান্ত পরকীয়রূপে প্রতিভাত হয় । লৌকিক জীবনে আমরা কোনও একটি জিনিসকে, সে বাহাজগতেরই হউক, অথবা মনোজগতেরই হউক, হয় একান্ত আমার বলিয়াই গ্রহণ করি, নতুবা উহার সহিত আমার যেন কোনও সম্বন্ধই নাই, উহা নিতান্তই পরকীয়, আমি কেবল উহার উদাসীন সাক্ষী মাত্র, এইরূপ ভাব দেখাইয়া থাকি । ব্যাবহারিক জগতে আমরা কোনও ক্রমেই এই ঐকান্তিক মমতা ও ঐকাস্তিক তাটস্থ্য বা ঔদাসীন্য—এই সীমাদ্বয়কে অতিক্রম করিতে পারি না। কিন্তু কবিবর্ণিত বিভগবাদির সহিত সহৃদয় সামাজিকচিত্তের সম্বন্ধ কি ব্যাবহারিক জীবনের এই মমতা ও ঔদাসীন্যরূপ পরিধিদ্বয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ? ভট্টনায়ক বলেন : তাহা নহে। সাহিত্যিক রসপ্রতীতির স্থলে কবিবর্ণিত অর্থসমূহ সামাজিকগণের চিত্তে একান্ত অগত্মগত অথবা একান্ত তটস্থ কোনরূপেই প্রতিভাত হয় না। বিভাব প্রভৃতি কাব্যবর্ণিত পদার্থসমূহ স্ব-পর-বিকল্পের অতীতরূপে সর্বসাধারণভাবে সহৃদয়ের চিত্তে উপস্থিত হয়। সহৃদয় দশকের দৃষ্টিতে শকুন্তলা শকুন্তলারূপে, নিজের প্রেয়সীরূপে প্রতিভাত হন না । কবিকল্পিত শকুন্তলা পাঠকের অথবা প্রেক্ষকের নিকট শুধু একটি symbol মাত্র, আর কিছুই নহে । শকুন্তলা কেবলমাত্র কাস্তারূপে সাধারণ সহৃদয়ের চিত্তভূমিতে অবতীর্ণ হন । কবিকল্পিত সীতাদেবী তাহার সমস্ত ঐতিহাসিকতা বিসর্জন দিয়া সহৃদয়ের রসাচুভূতির বিভাবরূপে অবিভূত হন । তিনি তখন রাজর্ষি জনকের পুত্রী নন, মহারাজ দশরথের কুলপ্রদীপ রামচন্দ্রের প্রেয়সী। ভাৰ্য নন। তিনি তখন দেশকালবিনিমুক্ত নায়িকার আদর্শ প্রতীক, একটি