পাতা:সাহিত্য-মীমাংসা - বিষ্ণুপদ ভট্টাচার্য্য.pdf/৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্য ও রসতত্ত্ব ፃፃ মধ্যে, ভোক্তা ও ভোগ্যের মধ্যে কোনও ভেদ তখন থাকে না । এই আস্বাদন একঘন—সমস্ত বিজাতীয় বিষয়চিস্ত হইতে নিমুক্ত। কাব্যের ও নাট্যের লোকাতীত মহিমাবশে, স্বভাবত চঞ্চল ও দুঃখযোনি চিত্তে সত্ত্বোদ্রেকবশে চিদানন্দঘন আত্মতত্ত্বের এই একান্তভাবে বহির্বিষয়পরাঙ মুখত, বিষয়োপরাগবিনিমুক্তি ও স্বরূপবিশ্রাস্তি—ইহাই কবিকর্মজনিত আনন্দানুভূতির নিগুঢ় রহস্য । এইক্ষণে আত্মা বা পরমশিবের যত কিছু অবিদ্যারচিত আবরণ বা মল, সে সকলই অকস্মাৎ অপগত হয়। তখন অহংতাবোধ থাকে বটে, কিন্তু সে অহংতা (egoism) সর্বব্যাপক,—ব্যাবহারিক জীবনের খণ্ডিত, পরিচ্ছিন্ন ‘অস্মিতা' নহে । ব্যাবহারিক জীবনের অস্মিতা ও মমতা কতকগুলি নির্দিষ্ট বিষয়ের সীমার মধ্যে সম্বন্ধ—দেহ আমার, পুত্র আমার, ঐশ্বর্য আমার, ভাযা অামার, আমি মুখী, আমি দুঃখী, আমি দরিদ্র, আমি ধনী এইরূপ । কিন্তু যখন কাব্যের সাধারণীকৃতি ও ভোগীরুতির মহিমাবশে এই পরিচ্ছিন্ন অহংতাবুদ্ধি লুপ্ত হয়, তখন বিশ্বের সমস্ত পদার্থ ই, ক্ষুদ্র দেহপিণ্ড হইতে আরম্ভ করিয়া সীমাহীন ব্রহ্মাও পর্যন্ত যত কিছু সমস্তই আমার হইয়া দাড়ায় । সকলের মধ্যেই আমি নিজের আত্মাকে অমুভব করি । “সর্বভূতেষু চাত্মানং সবভূতানি চাত্মনি।” আমি যেমন মানুষ, তেমনি আমি নদী, পর্বত, তরু, লতা, ওষধি, হস্তী, অশ্ব, সরীস্বপ, বিহঙ্গম সমস্তই আমি । আমার ব্যক্তিগত সুখ-দুঃখ যেমন আমার, সেইরূপ জগতের সকল প্রাণীর সুখ-দুঃখ, চিন্তা, প্রবৃত্তি সমস্তই তুল্যভাবে আমার । শৈবপ্রত্যভিজ্ঞাবাদিগণের মতে এই যে ব্যাপক অহংত ও মমতাবোধ, ইহার সহিত বৈদাস্তিক দার্শনিকগণের অহঙ্কার ও মমকারের একান্ত শূন্যতা ও বিলুপ্তি—তাহার কোনও পার্থক্য নাই । সববিধ সৃষ্টিকে ‘আমি ও আমার বলিয়া চিন্তা করা এবং অহংজ্ঞানের সম্পূর্ণ বিলয়—“আমি ও আমার বলিয়৷ কিছুই নাই? এইরূপ বুদ্ধি, পরস্পর অভিন্ন । একটির দ্বারা যেমন আপনার খণ্ডিত অহংতাজ্ঞানকে বিনষ্ট করিয়া তত্ত্বদৃষ্টি লাভ করিতে পারা যায়, অপরটিও সেইরূপ তুল্যভাবে মুক্তির সোপান। পূর্ণতা