পাতা:সাহিত্য-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৯৪
সাহিত্য

আপস করিয়া লয়। বস্তুত আমাদের কথা শ্রোতা ও বক্তা দুইজনের যোগেই তৈরি হইয়া উঠে।

 এইজন্য সাহিত্যে লেখক যাহার কাছে নিজে লেখাটি ধরিতেছে, মনে মনে নিজের অজ্ঞাতসারেও, তাহার প্রকৃতির সঙ্গে নিজের লেখাটি মিলাইয়া লইতেছে। দাশুরায়ের পাঁচালি দাশরথির ঠিক একলার নহে; যে সমাজ সেই পাঁচালি শুনিতেছে, তাহার সঙ্গে যোগে এই পাঁচালি রচিত। এইজন্য এই পাঁচালিতে কেবল দাশরথির একলার মনের কথা পাওয়া যায় না; ইহাতে একটি বিশেষ কালের বিশেষ মণ্ডলীর অনুরাগ-বিরাগ শ্রদ্ধাবিশ্বাস রুচি আপনি প্রকাশ পাইয়াছে।

 এমনি করিয়া লেখকদের মধ্যে কেহ বা বন্ধুকে, কেহ বা সম্প্রদায়কে, কেহ বা সমাজকে, কেহ বা সর্বকালের মানবকে আপনার কথা শুনাইতে চাহিয়াছেন। যাঁহারা কৃতকার্য হইয়াছেন তাঁহাদের লেখার মধ্যে বিশেষভাবে সেই বন্ধুর, সম্প্রদায়ের, সমাজের বা বিশ্বমানবের কিছু-না-কিছু পরিচয় পাওয়া যায়। এমনি করিয়া সাহিত্য কেবল লেখকের নহে, যাহাদের জন্য লিখিত তাহাদেরও পরিচয় বহন করে।

 বস্তুজগতেও ঠিক জিনিসটি ঠিক জায়গায় যখন আসর জমাইয়া বসে তখন চারি দিকের আনুকূল্য পাইয়া টিঁকিয়া যায়—এও ঠিক তেমনি। অতএব যে বস্তুটা টিকিয়া আছে সে যে কেবল নিজের পরিচয় দেয় তাহা নয়, সে তাহার চারি দিকের পরিচয় দেয়; কারণ, সে কেবল নিজের গুণে নহে, চারি দিকের গুণে টিকিয়া থাকে।

 এখন সাহিত্যের সেই গোড়াকার কথা, সেই দানা বাঁধার কথাটা ভাবিয়া দেখো। দুই-একটা দৃষ্টান্ত দেখানো যাক।

 কত নববর্ষার মেঘ, বলাকার শ্রেণী, তপ্ত ধরণীর ‘পরে বারিসেচনের সুগন্ধ, কত পর্বত-অরণ্য নদী-নির্ঝর নগর-গ্রামের উপর দিয়া ঘনপুঞ্জগম্ভীর আষাঢ়ের স্নিগ্ধ সঞ্চার কবির মনে কতদিন ধরিয়া কত ভাবের