পাতা:সাহিত্য-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
আলোচনা
১৯৭

হয় ‘নাইণ্টীন্‌থ্‌ সেন্‌চুরি’ যদি অত বড়ো আয়তনের কাগজ না হত তা হলে ওর লেখাগুলো ঢের বেশি পাঠ্য এবং খাঁটি হত।

 আমার তো মনে হয়, বঙ্কিমবাবুর নভেলগুলি ঠিক নভেল যত বড়ো হওয়া উচিত তার আদর্শ। ভাগ্যে তিনি ইংরাজি নভেলিস্টের অনুকরণে বাংলায় বৃহদায়তনের দস্তুর বেঁধে দেন নি, তা হলে বড়ো অসহ্য হয়ে উঠত— বিশেষত সমালোচকের পক্ষে। এক-একটা ইংরাজি নভেলে এত অতিরিক্ত বেশি কথা, বেশি ঘটনা, বেশি লোক যে, আমার মনে হয় ওটা একটা সাহিত্যের বর্বরতা। সমস্ত রাত্রি ধরে যাত্রাগান করার মতো। প্রাচীনকালেই ওটা শোভা পেত। তখন ছাপাখানা এবং প্রকাশকসম্প্রদায় ছিল না, তখন একখানা বই নিয়ে বহুকাল জাওর কাটবার সময় ছিল। এমন-কি, জর্জ এলিয়ট নভেল যদিও আমার খুব ভালো লাগে, তবু এটা আমার বরাবর মনে হয়, জিনিসগুলো বড়ো বেশি বড়ো—এত লোক, এত ঘটনা, এত কথার হিজিবিজি না থাকলে বইগুলো আরো ভালো হত। কাঁঠাল ফল দেখে যেমন মনে হয়—প্রকৃতি একটা ফলের মধ্যে ঠেসাঠেসি করে বিস্তর সারবান কোষ পুরতে চেষ্টা করে ফলটাকে আয়তনে খুব বৃহৎ এবং ওজনে খুব ভারী করেছেন বটে এবং একজন লোকের সংকীর্ণ পাকযন্ত্রের পক্ষে কম দুঃসহ করেন নি, কিন্তু হাতের কাজটা মাটি করেছেন। এরই একটাকে ভেঙে ত্রিশ-পঁয়ত্রিশটা ফল গড়লে সেগুলো দেখতে ভালো হত। জর্জ এলিয়টের এক-একটি নভেল এক-একটি সাহিত্যকাঁঠাল-বিশেষ। ক্ষমতা দেখে মানুষ আশ্চর্য হয় বটে, কিন্তু সৌন্দর্য দেখে মানুষ খুশি হয়। স্থায়িত্বের পক্ষে সহজতা সরলতা সৌন্দর্য যে প্রধান উপকরণ তার আর সন্দেহ নেই।

 সত্যকে যথাসাধ্য বাড়িয়ে তুলে তাকে একটা প্রচলিত দস্তুরমত আকার দিয়ে সত্যের খর্বতা করা হয়, অতএব তায় কাজ নেই। তা ছাড়া সত্যকে এমনভাবে প্রকাশ করা যাক যাতে লোকে অবিলম্বে জানতে পারে যে