পাতা:সাহিত্য-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
২৫৬
সাহিত্য

আহূত হইয়াছিল। এত কাল পরে আজই এমনতরো একটা ব্যাপার যে ঘটিল, তাহার তাৎপর্য কী? বাংলাসাহিত্যের প্রতি অনুরাগ যে হঠাৎ বন্যার মতো এক রাত্রে বাড়িয়া উঠিয়াছে তাহা নহে। আসল কথাটা এই যে, সমস্ত বাংলাদেশে একটা মিলনের দক্ষিণ-হাওয়া দিয়াছে। দেখিতে দেখিতে বাংলাদেশে চারি দিকে কত সমিতি কত সম্প্রদায় যে দানা বাঁধিয়া উঠিয়াছে তাহার ঠিকানা নাই। আজ আমরা যত রকম করিয়া পারি মিলিতে চাই। আমরা যে-কোনো একটা উদ্দেশ্য খাড়া করিয়া দিয়া যে-কোনো একটা সূত্র লইয়া পরস্পরকে বাঁধিতে চাই। কত কাল ধরিয়া আমাদের দেশের প্রধান পক্ষেরা বলিয়া আসিয়াছেন এক না হইতে পারিলে আমাদের রক্ষা নাই, কবিরা ছন্দোবন্ধে ঐক্যের মহিমা ঘোষণা করিয়া আসিয়াছেন, নীতিঞ্চেরা বলিয়াছেন তৃণ একত্র করিয়া পাকাইলে হাতিকে বাঁধা যায়—তবু দীর্ঘকাল হাতি বাঁধিবার জন্য কাহারো কোনো উদ্‌যোগ দেখা যায় নাই। কিন্তু শুভলগ্নে ঐক্যের দানা বাঁধিবার যখন সময় আসিল তখন হঠাৎ একটা আঘাতেই সমস্ত দেশে একটা কী টান পড়িয়া গেল—যে যেখানে পারে সেইখানেই একটা-কোনো নাম লইয়া একটা-কিছু সংহতির মধ্যে ধরা দিবার জন্য ব্যাকুলতা অনুভব করিতে লাগিল। এখন এই আবেগ থামাইয়া রাখা দায়। স্বদেশের মাঝখান হইতে মিলনের টান পড়িতেই মাতৃকক্ষের ছোটোবড়ো সমস্ত দরজা-জানালা খুলিয়া গেছে। কে আমাদিগকে চলিতে বলিতেছে? উদ্দেশ্য কী? উদ্দেশ্য তো পরিষ্কার করিয়া কিছুই বলিতে পারি না। যদি বানাইয়া বলিতে বল তবে বড়ো বড়ো নামওয়ালা উদ্দ্যেশ্য বানাইয়া দেওয়া কিছুই শক্ত নয়। কুঁড়ি যে কেন বাধা ছিঁড়িয়া ফুল হইয়া ফুটিতে চায় তাহা ফুলের বিধাতাই নিশ্চয় জানেন, কিন্তু দক্ষিণে হাওয়া দিলে সাধ্য কী সে চুপ করিয়া থাকে। তাহার কোনো কৈফিয়ত নাই, তাহার একমাত্র বলিবার কথা: আমি থাকিতে পারিলাম না। বাংলাদেশের