পাতা:সাহিত্য-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
২৬৮
সাহিত্য

স্বদেশের আবেদন ছাত্রশালার দ্বারে উপস্থিত করিবার জন্য সাহিত্যপরিষদের ন্যায় প্রবীণমণ্ডলীকে অনুরোধ করিতে আমি সাহস করিয়াছিলাম। তখনো স্বদেশী আন্দোলনের সূত্রপাত হয় নাই।

 সেদিনকার অভিভাষণের[১] উপসংহারে বলিয়াছিলাম, ‘জননী, সময় নিকটবর্তী হইয়াছে, স্কুলের ছুটি হইয়াছে, সভা ভাঙিয়াছে, এইবার তোমার কুটিরপ্রাঙ্গণের অভিমুখে তোমার ক্ষুধিত সন্তানের পদধ্বনি শোনা যাইতেছে, এখন বাজাও তোমার শঙ্খ, জ্বালো তোমার প্রদীপ—তোমার প্রসারিত শীতলপাটির উপরে আমাদের ছোটো বড়ো সকল ভাইয়ের মিলনকে তোমার অশ্রুগদ্‌গদ আশীর্বচনের দ্বারা সার্থক করিবার জন্য প্রস্তুত হইয়া থাকো।’

 তখন আমাদের সময় যে কত নিকটবর্তী হইয়াছিল তাহা আমাদের ভাগ্যবিধাতাই নিশ্চিতরূপে জানিতেছিলেন। কিন্তু এখনো আমাদের গর্ব করিবার দিন আসে নাই, চেষ্টা করিবার দিন দেখা দিয়াছে মাত্র। যে-সকল কাজ প্রতিদিন করিবার এবং প্রতি মুহুর্তে বাহির হইতে যাহার পুরস্কার পাইবার নহে—যাহার প্রধান বাধা বাহিরের প্রতিকূলতা নহে, আমাদেরই জড়ত্ব, দেশের প্রতি আমাদেরই আন্তরিক ঔদাসীন্য—সেই-সকল কাজেই আশাপথে নূতনপ্রবৃত্ত তরুণ জীবনগুলিকে উৎসর্গ করিতে হইবে। সেইজন্য বিশেষ করিয়া আজ ছাত্রদের দিকে চাহিতেছি। এ সভায় ছাত্রসম্প্রদায়ের যাঁহারা উপস্থিত আছেন আমি তাঁহাদিগকে বলিতে পারি, প্রৌঢ়বয়সের শিখরদেশে আরোহণ করিয়াও আমি ছাত্রগণকে সুদূর প্রবীণত্বের চক্ষে একদিনও ছোটো করিয়া দেখি নাই।

 বয়স্কমণ্ডলীর মধ্যে যখন দেখিতে পাই তাঁহারা পুঁথিগত বিদ্যা লইয়াই আছেন, প্রত্যক্ষ ব্যাপারের সজীব শিক্ষাকে তাঁহারা আমল দেন না—

  1. দ্রষ্টব্য ‘ছাত্রদের প্রতি সম্ভাষণ’: শিক্ষা