পাতা:সাহিত্য-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
সাহিত্যপরিষৎ
২৭৭

দুরবস্থা তাহারা পরের কাছ হইতে কোনো দুর্লভ জিনিস চাহিয়া লইয়া সেটাকে যথার্থভাবে রক্ষা করিতে পারিবে, এমন দুরাশা কেন তাহাদের মনে স্থান পায়? যে কাজ আমাদের হাতের কাছেই আছে এবং যাহা আমরা ছাড়া আর-কেহই ঠিকমত সাধন করিতে পারে না, তাহাকেই সত্যরূপে সম্পন্ন করিতে থাকিলে তবেই আমরা সেই শক্তি পাইব—যে শক্তির দ্বারা পরের কাছ হইতে নিঃসংকোচে আমাদের প্রাপ্য আদায় করিয়া তাহাকে কাজে খাটাইতে পারি। এইজন্যই বলিতেছি, যাহা নিতান্তই আমাদের নিজের কাজ তাহার যেটাতেই হাত দিব সেটার দ্বারাই আমাদের মানুষ হইয়া উঠিবার সহায়তা হইবে এবং মানুষ হইয়া উঠিলে তবেই আমাদের দ্বারা সমস্তই সম্ভব হইতে পারিবে।

 আমরা যখন প্রায় পঁচিশ-ত্রিশ বৎসর পূর্বে ভারতবর্ষের প্রাচীন গৌরব লইয়া স্বদেশাভিমান অনুভব করিতে শুরু করিয়াছিলাম তখন সেই প্রাচীন বিবরণের জোগান পাইবার জন্য আমরা বিদেশের দিকেই অঞ্জলি পাতিয়াছিলাম; এমন কোনো পণ্ডিত পাইলাম না যিনি স্বদেশের ইতিহাস উদ্ধার করিবার জন্য জর্মান পণ্ডিতের মতো নিজের সমস্ত চেষ্টা ও সময় এই কাজে উৎসর্গ করিতে পারিলেন। আজ আমরা স্বদেশপ্রেম লইয়া কম কথা বলিতেছি না; কিন্তু আজও এই স্বদেশের সামান্য একটি বৃত্তান্তও যদি জানিতে ইচ্ছা করি তবে ইংরেজের রচিত পুঁথি ছাড়া আমাদের গতি নাই। এমন অবস্থায় পরের দরবারে দাবি লইয়া দাঁড়াই কোন্‌ মুখে, সম্মানই বা চাই কোন্‌ লজ্জায়, আর সফলতাই বা প্রত্যাশা করি কিরূপে? যাহার ব্যবসা চলিতেছে বাজারে তাহারই ক্রেডিট থাকে, সুতরাং অন্য ধনীর কাছ হইতে সে যে সাহায্য পায় তাহাতে তাহার লজ্জার কারণ ঘটে না। কিন্তু যাহার সিকি পয়সার কারবার নাই সে যখন ধনীর দ্বারে দাঁড়ায় তখন কি সে মাথা হেঁট করিয়া দাঁড়ায় না? এবং তখন যদি সে আঁজলা ভরিয়া কড়ি না পায় তবে তাহা লইয়া বকাবকি করা কি তাহার পক্ষে