পাতা:সাহিত্য-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
২৮২
সাহিত্য

তাহারাই স্বদেশ বলিতে পারে এবং স্বদেশ-জিনিসটা যে কী তাহাদিগকে বক্তৃতা করিয়া বুঝাইতেও হয় না; মৌমাছিকে আপন চাকের মর্যাদা বুঝাইবার জন্য বড়ো বড়ো পুঁথির দোহাই পাড়া সম্পূর্ণ অনাবশ্যক। আমরা দেশের কোনো সত্যকর্মে নিজেরা হাত না লাগাইয়াও আজ পঁচিশ-ত্রিশ বৎসর ইংরেজি ও বাংলায়, গদ্যে ও পদ্যে, স্বদেশের গৌরব ঘোষণা করিয়া আসিতেছি। কিন্তু এই স্বদেশের স্ব'টা যে কোথায় এ প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়া গোল্ডস্টুকর ম্যাক্স্‌মূলর মূয়রের প্রত্নতত্ত্ব খুঁজিয়া হয়রান হইতে হইয়াছে। শাণ্ডিল্যমুনির আশ্রমের জায়গাটার যদি আজ হঠাৎ আবিষ্কার হয় তবে আমি শাণ্ডিল্যগোত্রের দোহাই দিয়া সেটা দখল করিতে গেলে আইনের পেয়াদা তো মানিবে না। পাঁচ-সাত হাজার বৎসর পূর্বের উপর স্বদেশের স্বকীয়ত্বের বরাত দিয়া গৌরব করিতে বসিলে কেবল গলা ভাঙাই সার হয়। স্বকীয়ত্বকে অবিচ্ছিন্ন নিজের চেষ্টায় রক্ষা করিতে হয়। আজ আমাদের পক্ষে স্বদেশ কোথায়? সমস্ত দেশের মধ্যে যেখানেই আমরা নিজের শক্তিকে দেশবাসীদের জন্য কিছু-একটা গড়িয়া তুলিতে পারিয়াছি কেবলমাত্র সেইখানেই আমাদের স্বদেশ। এমনি করিয়া যাহা-কিছু গড়িয়া তুলিতে পারিব তাহাতেই আমাদের স্বদেশের বিস্তার ঘটিতে থাকিবে, সেই স্বদেশের উপর আমাদের সমস্ত প্রাণের দাবি জন্মিতে থাকিবে; অন্যে যাহা দয়া করিয়া দিবে তাহাতেও নহে এবং বহু হাজার বৎসর পূর্বে যে দলিল পাকা হইয়াছিল তাহাতেও না।

 অদ্যকার সভায় আমার নিবেদন এই, সাহিত্যপরিষদের মধ্যে আপনারা সকলে মিলিয়া স্বদেশকে সত্য করিয়া তুলুন। বাংলাদেশের প্রত্যেক জেলা এবং প্রত্যেক জেলার প্রত্যেক বাঙালি সাহিত্যপরিষদের মধ্যে নিজের ইচ্ছা ও চেষ্টাকে একত্রে জাগ্রত করিয়া আজ যাহা অস্ফুট আছে তাহা স্পষ্ট করুন, যাহা ক্ষুদ্র আছে তাহাকে মহৎ করুন। কোন্‌খানে এই পরিষদের কী অসম্পূর্ণতা আছে তাহা লইয়া প্রশ্ন করিবেন না, ইহাকে