পাতা:সাহিত্য-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
সাহিত্যপরিষৎ
২৮৩

সম্পূর্ণ করিয়া তুলিয়া প্রত্যেকে গৌরবলাভ করুন। দেবপ্রতিমা ঘরে আসিয়া পড়িলে গৃহস্থকে তাহার পূজা সারিতেই হয়; আজ বাঙালির ঘরে তিনটি দেবপ্রতিমা আসিয়াছে—সাহিত্যপরিষৎ, শিক্ষাপরিষৎ ও শিল্পবিদ্যালয়। ইহাদিগকে ফিরাইয়া দিলে দেশে যে অমঙ্গল ঘটিবে তাহার ভার আমরা বহন করিতে পারিব না।

 অনেকের মনে এ প্রশ্ন উঠিবে, দেশের কাজ হিসাবে সাহিত্যপরিষদের কাজটা এমনি কী একটা মস্ত ব্যাপার! এইরূপ প্রশ্ন আমাদের দেশের একটা বিষম বিপদ। য়ুরোপ-আমেরিকা তাহার প্রকাণ্ড কর্মশালা লইয়া আমাদের চোখের সামনে আসিয়া দাঁড়াইয়াছে, তাই দেখিয়া আমাদের অবস্থা বড়ো হইবার পূর্বেই আমাদের নজর বড়ো হইয়া উঠিয়াছে। যে কাজ দেখিতে ছোটো তাহাতে উৎসাহই হয় না; এইজন্য বীজরোপন করা হইল না, একেবারে অস্ত বনস্পতি তুলিয়া আনিয়া পুঁতিয়া অন্য দেশের অরণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করিবার জন্য বাস্ত হইয়া পড়িয়াছি। এ তো প্রেমের লক্ষ নহে, এ অহংকারের লক্ষণ। প্রেমের অসীম ধৈর্য,কিন্তু অহংকার অত্যন্ত ব্যস্ত। আমাদের দুর্ভাগ্য এই যে, ইংরেজ নানামতে আমাদিগকে অবজ্ঞা দেখাইয়া আমাদের অহংকারকে অত্যন্ত রাঙা করিয়া তুলিয়াছে। আমাদের এই কথাই কেবল বলিবার প্রবৃত্তি হইতেছে, আমরা কিছুতেই কম নই। এইজন্য আমরা যাহা-কিছু করি সেটাকে খুবই বড়ো করিয়া দেখাইতে না পারিলে আমাদের বুক ফাটিয়া যায়। একটা কাজ ফাঁদিবার প্রথমেই তো একটা খুব মস্ত নামকরণ হয়; নামের সঙ্গে ‘ন্যাশনাল’ শব্দটা কিংবা ঐরকমের একটা বিদেশী বিড়ম্বনা জুড়িয়া দেওয়া যায়। এই নামকরণ-অনুষ্ঠানেই গোড়ায় ভারি একটি পরিতৃপ্তি বোধ হয়। তার পরে বড়ো নামটি দিলেই বড়ো আয়তন না দিলে চলে না; নতুবা বড়ো নাম ক্ষুদ্র আকৃতিকে কেবলই বিদ্রূপ করিতে থাকে। তখন নিজের সাধ্যকে লঙ্ঘন করিতে চাই। তক্‌মাওয়ালা