পাতা:সাহিত্য-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গ্রন্থপরিচয়
২৯৩

 বর্তমান বঙ্গসাহিত্যও হঠাৎ একদিন অভাবনীয় উন্নতির উচ্চশিখরে উঠিবে, এরূপ আশা করি। কখন উঠিবে? যখন একমাত্র ভাব উচ্ছ্বসিত হইয়া তাহার প্লাবনের দ্বারা নানাকে এক করিয়া দিবে, সকলের হৃদয়কে সকলের সম্মুখে আনিয়া দিবে, কাহারও কাহাকেও বুঝিতে বিলম্ব হইবে। যখন বিভাগের মধ্যে এককে পাইব, বিচ্ছেদের মধ্যে মিলন পাইব। যখন অনুগ্রহের দ্বারা পীড়িত হইব না, যেখানে আমাদের গৌরব আছে সেই জায়গাটা সন্ধান করিয়া বাহির করিতে পারিব। যখন আমরা বর্তমানের বন্ধন ছেদন করিয়া তাহার বাহিরে একটা অনন্ত আশার ক্ষেত্র বিস্তৃত দেখিব। এখন ইংরাজের সাহিত্য দর্শন বিজ্ঞান রাষ্ট্রতন্ত্র আমাদিগকে চারি দিকে নীরভাবে বেষ্টন করিয়া আছে, আমরা তাহার বাহিরে কিছুই দেখিতে পাই না। পরের জিনিস আমাদিগকে একেবারে গ্রাস করিয়াছে। যখন কোনো প্রতিভাসম্পন্ন মনীষী আসিয়া এই বেষ্টনকে ভেদ করিয়া আমাদিগকে মুক্তি দিবেন, যখন হঠাৎ আমরা অনুভব করিব অনুকরণই আমাদের একমাত্র গৌরব নয়, আবিষ্কার করিব আমাদের নিজের মধ্যে এমন এক বিশেষ শক্তি আছে যাহা অন্য কোনো জাতির নাই, যখন চেতনা হইবে ইংরাজি গ্রন্থের অর্থপুস্তক না মুখস্থ করিয়াও আমাদের শিক্ষা সম্পূর্ণ হইতে পারে, যখন আমাদের নিজের গৌরবের আনন্দে আমাদিগকে এক করিয়া দিবে, পরস্পরের সহিত সম্বন্ধস্বীকারে আমাদের কোনো লজ্জা থাকিবে না, তখন সেই আনন্দের দিনে, আশার দিনে, গৌরবের দিনে, মিলনের দিনে, যে সৌভাগ্যবান কবি বাংলাদেশে গান ধরিবেন তাহার গান জগতের মধ্যে সার্থক হইবে। বঙ্গদেশ যখন নিজের অমরত্ব নিজের মধ্যে সুস্পষ্টরূপে উপলব্ধি করিবে, নিজের সম্বন্ধে যখন তাহার কোনো সংশয় কোনো সংকোচ থাকিবে না, তখন নির্ভীক বঙ্গসাহিত্য সমস্ত সমালোচকের সমস্ত বাঁধি বোল, সমস্ত ইস্কুলের সমস্ত মুখস্থ গৎ অবজ্ঞাভরে উপেক্ষা করিয়া নিজের অন্তরের মহান আদর্শ অবলম্বন

১৯ক