পাতা:সাহিত্য-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৯৪
সাহিত্য

করিয়া অপূর্ব কারুকৌশলে আপন নবীন দেবমন্দিরকে অভ্রভেদী করিয়া তুলিবে এবং মুহূর্তের মধ্যে তাহাকে প্রাচীনের চিরন্তন মহিমা সমর্পণ করিবে। আমরা নিজের অবস্থা-গণ্ডীর মধ্যে বদ্ধ হইয়া যাহা পারিয়াছি তাহাই করিয়াছি, যাহা শিখিয়াছি তাহাই বকিয়াছি, যাহা সম্মুখে পাইয়াছি তাহাই বিহিত নিয়মে সাজাইয়া গেছি। আমাদের রচনা বাংলার বর্তমান ভিত্তির মধ্যে এখনও কোনাে নূতন গবাক্ষ কাটিয়া কোনাে নূতন আলােক আনে নাই, কোনাে নূতন আশায় দেশকে প্লাবিত করে নাই, সাহিত্যকে এমন একটি প্রাণশক্তি দেয় নাই যে শক্তিবলে আমাদের সাহিত্য দেশের ও বিদেশের পক্ষে চিরকালের জন্য প্রাণের সৌন্দর্যের ও কল্যাণের অক্ষয় ভাণ্ডার হইয়া থাকে।

 কিন্তু অন্তরের মধ্যে অনুভব করিতেছি, সেদিন দূরে নাই। সমস্ত অনুকরণ অনুসরণকে তুচ্ছ করিয়া দিয়া নিজেকে নিজে লাভ করিবার জন্য আমাদের হৃদয়ের মধ্যে তীব্র বেদনা উপস্থিত হইয়াছে। মরুভূমির মধ্যে ক্ষুধাতুর তৃষার্তের স্কন্ধে টাকার থলি যেমন কেবল ভারমাত্র তেমনি বিদেশের যে-সমস্ত বহুমূল্য বােঝ আমরা মাথায় চাপাইয়াছি, বুঝিতে পারিতেছি, তাহার মূল্য যতই হােক, তাহা আমাদের বল অপহরণ করিতেছে; এখন মন কেবলই বলিতেছে: চাহি না, চাহি না, এ-সমস্ত কিছুই চাহি না। তবে কী চাই? হৃদয়ের মধ্য হইতে এই প্রার্থনা উর্ধস্বরে কঁদিয়া উঠিতেছে: আপনাকে চাই! চাই আপনার শক্তিকে প্রচুর হইলেও উপকরণমাত্রে কোনাে লাভ নাই, তাহা আবর্জনা। সভা সমিতি দরখাস্ত ও কগ্রেসে যে আমাদিগকে হীনতা হইতে মুক্তি দিতে পারে এ মােহ আমাদের মন হইতে চলিয়া যাইতেছে, গার্মেণ্ট অনুগ্রহপূর্বক উচ্চ আসনে চড়াইয়া আমাদিগকে বড়াে করিতে পারে এই মিথ্যা আশাও শিথিল হইয়া আসিয়াছে। এখনি যথার্থ সময়। এখনি মনে হইতেছে, কোনাে মহাপুরুষের আবির্ভাব আসন্ন হইয়াছে যিনি ভারতবর্ষের সম্মুখে