পাতা:সাহিত্য-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গ্রন্থপরিচয়
২৯৫

ভারতবর্ষের পথ উদঘাটিত করিয়া দিবেন; যিনি আমাদের অন্তরের মধ্যে এই কথা ধ্বনিত করিয়া তুলিবেন যে, আমরা ভারতবাসী, আমরা ফিরিঙ্গি নই, আমরা বর্বর নই, আমাদের লজ্জার কোনো কারণ নাই; যিনি আমাদের মনকে, আমাদের হৃদয়কে, আমাদের কল্পনাকে স্বাধীন করিয়া দিবেন; যিনি আমাদের শিক্ষার বন্ধনমোচন করিবেন, আমাদের বিদেশী সংস্কারের সমস্ত কুহেলিকা অপসারিত করিয়া দিবেন। তখন আমাদের বর্তমান অবস্থা যেমনি থাক, আমাদের চিত্ত তাহার বহু উর্ধ্বে উঠিয়। সমস্ত বিশ্বজগৎকে প্রত্যক্ষ আপনার সম্মুখে প্রসারিত দেখিবে। এমন মুক্তি আছে যাহাকে রাজার শাসন, প্রবলের পীড়ন, অবস্থার পেষণ স্পর্শ করিতে পারে না। সেই মুক্তিই ভারতবর্ষের লক্ষ্যস্থল ছিল এবং সকল ক্ষুদ্রতা ও স্বার্থচেষ্টার আক্রমণ হইতে সেই রত্নকে রক্ষা করিবার ভার লইয়াই ব্রাহ্মণ ভারতবর্ষে গৌরব লাভ করিয়াছিলেন এবং সেই রত্ব হারাইয়াই ব্রাহ্মণ ও ভারতবর্ষ রসাতলে গেছে। সেই মুক্তির আশা ও আনন্দ যখন অরুণালোকের ন্যায় আমাদের মাতৃভূমির উদয়াচল স্পর্শ করিবে তখন যে অপরূপ সংগীত চতুদিক হইতে ধ্বনিত উদ্‌গীত হইয় উঠিবে তাহ আমার অস্তরে বাজিতেছে, কিন্তু তাহ প্রকাশ করিবার সাধ্য আমার নাই। সেইদিনকার বঙ্গসাহিত্যের জন্য আমরা অপেক্ষ করিয়া আছি, ততদিন যাহা করিতেছি তাহা ক্রীড়াচ্ছলে সময়যাপন মাত্র।

—বঙ্গদর্শন। শ্রাবণ ১৩০৯

১৬, ১৭, ১৮, ১৯ সাধনা পত্রে প্রকাশিত এই নিবন্ধমালা কবিবন্ধু লোকেন্দ্রনাথ পালিতের সহিত কবির পত্রালাপচ্ছলে রচিত হইয়াছিল। কৌতুহলী পাঠক সাধনায় লোকেন্দ্রনাথের পত্রপ্রবন্ধগুলিও পাইবেন; ‘সাহিত্যের সত্য’, ‘সাহিত্যের উপাদান’ এবং ‘সাহিত্যের নিত্যলক্ষণ' শিরোনামে ১২৯৮ চৈত্র, ১২৯৯ জ্যৈষ্ঠ এবং ১২৯৯ শ্রাবণ সংখ্যায় মুদ্রিত হইয়াছিল।