পাতা:সাহিত্য-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গ্রন্থপরিচয়
২৯৯

তুলিবার আশা বহন করিয়া আনিয়াছে বলিয়াই আমরা তাহার অভ্যুদয়কে বাংলাদেশের পুণ্যফল বলিয়া গণনা করিতেছি।

 আমাদের এই সাহিত্যপরিষৎ এতদিন গর্ভবাসে ছিল। সে অল্পে অল্পে রসে রক্তে পরিপুষ্ট হইয়া উঠিতেছিল। তাহার সুহৃগণ তাহাকে নানা আঘাত-অপঘাত হইতে সযত্নে বাঁচাইয়া আসিয়াছেন। তাহার দশমাস কাটিয়া গিয়াছে, আজ সে ভূমিষ্ঠ হইয়াছে।

 কবি বলিয়াছেন: শরীরমাদ্যং খলু ধর্মসাধন। ধর্মসাধনের গােড়াতেই শরীরের প্রয়ােজন হয়। সাহিত্যপরিষদের সেই আদ্য প্রয়ােজন আজ সম্পূর্ণ হইয়াছে; এখন হইতে তাহার ধর্মসাধনা সবলে সিদ্ধির পথে অগ্রসর হইবে এইরূপ আশা করা যাইতেছে।

 ইতর জন্তুর অপেক্ষা মানুষের গর্ভবাসকালও দীর্ঘ; তাহার শৈশবঅবস্থাও অচির নহে। শ্রেষ্ঠতালাভের মূল্যম্বরূপ মানুষকে এই বিলম্ব স্বীকার করিতে হয়।

 সাহিত্যপরিষৎকেও তাহার বাহশরীর পূর্ণ করিতে বিলম্ব সাধিত হইয়াছে। অনেক দিন ধরিয়া নিজের প্রাণশক্তির পরিচয় দিয়া দেশের লােকের শ্রদ্ধা ও আকাঙ্ক্ষার মধ্যে স্থানলাভ করিয়া তবে তাহার এই স্থূলদেহটি আজ প্রকাশ প্রাপ্ত হইয়াছে।

 এই স্বাভাবিক বিলম্বই আমাদের পক্ষে আশার কারণ। ইহা ভােজবাজির খেলার মতাে অকস্মাৎ কোনাে খামখেয়ালির শ্রদ্ধাহীন টাকার জোরে এক রাত্রে সৃষ্ট হয় নাই। অনেক দিন দেশের হৃৎসঞ্চারিত রক্তের দ্বারা পুষ্ট হইয়া, তাহার জীবন হইতে জীবনলাভ করিয়া, তবেই প্রাকৃতিক অভিব্যক্তির নিয়মে পরিষদের শারীরিক আবির্ভাব ঘটিয়াছে। কিন্তু এখনাে আমাদের সম্পূর্ণ নির্ভয় ও নিশ্চিন্ত হইবার সময় আসে নাই। এখনাে এ শিশু অনেক দিন জননীর সতর্ক স্নেহের অপেক্ষা রাখে। তাহার পরে বড় হইয়া বলিষ্ঠ হইয়া জননীকে নির্ভর দান করিবে।