পাতা:সাহিত্য-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাহিত্য

 অদ্যকার উৎসবে এই নৰদেহপ্রাপ্ত সাহিত্যপরিষদের মুখ দেখিয়া সমস্ত দেশের হে ও আশীর্বাদ ইহার প্রতি আকৃষ্ট হইবে, এই আমরা আশা করিয়া আছি। ঘেপর্যন্ত ইহার শৈশবের দুর্বলতা কিছুমাত্র থাকিবে সেপর্য বাঙালি ইহাকে পােষণ করিবে, রক্ষা করিবে, ইহার অভাব দূর করিয়া নিজের অবমােচনের পন্থা করিবে, এই অত্যন্ত স্বাভাবিক প্রত্যাশা লইয়া আজ আমরা আনন্দ করিতে আসিয়াছি।

 তবু মন হইতে ভয় দূর হয় না। কারণ, যাহারা দুর্ভাগা তাহারা স্বভাব হইতেই ভ্রষ্ট হয়। যে পুত্র পূর্ণতা দান করে সকলে তাহাকে স্বভাবতই পূর্ণ করিতে চায়; কেবল ভাগ্যে যাহার দুর্গতি আছে সে আপন ভাবী আম্পদকেও অন্নদান করিতে বিমুখ হয়।

 বাংলাদেশের ঘরেও মাঝে মাঝে দেবলােক হইতে মঙ্গল নানা আকার ধরিয়া অবতীর্ণ হইয়াছে। আমরা তাহার সকলটিকে পালন করি নাই। এমনি করিয়া অনেক নবীন আগন্তুককেই আমরা অনাদরে অভুক্ত রাখিয়া ফিরাইয়া দিয়াছি। সেই-সকল অপমানিত মঙ্গলের অভিসম্পাত অনেক জমা হইয়া উঠিয়াছে; তাহারাই আমাদের উন্নতিপথের এক-একটি বড় বড় বাধা রচনা করিয়া রহিয়াছে। বাংলাদেশের ক্রোড়ে আজ যে কল্যাণের কমনীয় শৈশব সাহিত্যপরিষৎরূপে আমাদের দর্শনগােচর হইল, ইহার প্রতি আমাদের চিত্ত প্রসন্ন হউক, আনন্দের আনুকূল্য প্রসারিত হউক বিধাতাপুরুষ এই সভাতলে উপস্থিত থাকিয়া তাহার অলক্ষ্য লেখনী দিয়া অদ্য এই শিশুর ললাটে যে অদৃশ্যলিপি লিখিতেছেন তাহাতে বাঙালির গৌরব, বাঙালির কীর্তি, বাঙালির চরিতার্থ কালে কালে সপ্রমাণ হইয়া উইক, অন্তরের এই কামনা প্রকাশ করিয়া আমি আসন গ্রহণ করিতেছি।

—পরিষৎপরিচয় (ফান ১৩৫৬)