ভক্তিমানেরা আর-এক ভাবে করে। বুদ্ধিমান মনে করে, পূজা করিয়া ভগবানের কাছ হইতে সদ্গতি আদায় করিয়া লইব; আর ভক্তিমান বলে, পূজা না করিলে আমার ভক্তির পূর্ণতা হয় না, ইহার আর কোনো ফল না’ই থাকুক, হৃদয়ের ভক্তিকে বাহিরে স্থান দিয়া তাহাকেই পূরা আশ্রয় দেওয়া হইল। এইরূপে ভক্তি পূজার মধ্যে নিজেকে প্রকাশ করিয়া নিজেকেই সার্থক করে। বুদ্ধিমানের পূজা সুদে টাকা খাটানো; ভক্তিমানের পূজা একেবারেই বাজে খরচ। হৃদয় আপনাকে প্রকাশ করিতে গিয়া লোকসানকে একেবারে গণ্যই করে না।
বিশ্বজগতের মধ্যেও যেখানে আমরা আমাদের হৃদয়ের এই ধর্মটি দেখি সেখানেই আমাদের হৃদয় আপনিই আপনাকে ধরা দিয়া বসে, কোনো কথাটি জিজ্ঞাসা করে না। জগতের মধ্যে এই বেহিসাবি বাজে খরচের দিকটা সৌন্দর্য। যখন দেখি,ফুল কেবলমাত্র বীজ হইয়া উঠিবার জন্যই তাড়া লাগাইতেছে না, নিজের সমস্ত প্রয়োজনকে ছাপাইয়া সুন্দর হইয়া ফুটিতেছে—মেঘ কেবল জল ঝরাইয়া কাজ সারিয়া তাড়াতাড়ি ছুটি লইতেছে না, রহিয়াবসিয়া বিনা প্রয়োজনে রঙের ছটায় আমাদের চোখ কাড়িয়া লইতেছে—গাছগুলা কেবল কাঠি হইয়া শীর্ণ কাঙালের মতো বৃষ্টি ও আলোকের জন্য হাত বাড়াইয়া নাই, সবুজ শোভার পুঞ্জ পুঞ্জ ঐশ্বর্যে দিক্বধূদের ডালি ভরিয়া দিতেছে—যখন দেখি, সমুদ্র যে কেবল জলকে মেঘরূপে পৃথিবীর চারি দিকে প্রচার করিয়া দিবার একটা মস্ত আপিস তাহা নহে, সে আপনার তরল নীলিমার অতলস্পর্শ ভয়ের দ্বারা ভীষণ—এবং পর্বত কেবল ধরাতলে নদীর জল জোগাইয়াই ক্ষান্ত নহে, সে যোগনিমগ্ন রুদ্রের মতো ভয়ংকরকে আকাশ জুড়িয়া নিস্তব্ধ করিয়া রাখিয়াছে—তখন জগতের মধ্যে আমরা হৃদয়ধর্মের পরিচয় পাই। তখন চিরপ্রবীণ বুদ্ধি মাথা নাড়িয়া প্রশ্ন করে, জগৎ জুড়িয়া এত অনাবশ্যক চেষ্টার বাজে খরচ কেন? চিরনবীন হৃদয় বলে, কেবলমাত্র আমাকে